মেহেরপুর জেলা জজ আদালত ভবনের ৩য় তলা থেকে সীমা খাতুন নামের এক গৃহবধুকে ফেলে হত্যা চেষ্টা করার অভিযোগ স্বামী মামুনের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্বামী মামুনও ৩য় তলা থেকে নিচে পড়ে আহত হয়েছে। তবে স্বামী—স্ত্রী দুজনেই একে অপরকে ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
আহতরা হলেন গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের রশিদের ছেলে মামুন ও রামদেবপুর গ্রামের ফরিদের মেয়ে সিমা খাতুন। পারবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর পূর্বে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের ১০ বছর পার হলেও তাদের কোনো সন্তান না হওয়ায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ সৃস্টি হয়।
এক পর্যায় স্ত্রী তার স্বামীর সাথে সংসার না করার জন্য পারিবারিকভাবে জানান। স্বামী মামুন তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চাওয়ায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ে। অবশেষে সীমা খাতুন তার স্বামীর নামে যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ চারটি মালা দায়ের করেন।
সোমবার মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে যৌতুক মামলার (মামলা নং সিআর ১৭৬/২৩) নি:স্পত্তির দিন ধার্য ছিলো। মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জুয়েল রানা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের নিমিত্তে মামলার নি:স্পত্তির রায় দেন।
আহত সিমা খাতুন জানান, ১০ বছর আগে গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের মামুনের সাথে বিয়ে হয়। নানা কারনে তার সাথে সংসার জীবন ভালো না যাওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে মেহেরপুর জেলা জজ পারিবারিক আদালতে খোরপশ দাবী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে দুই পরিবারের সমঝোতায় মামলাটি মিমাংসা করা হয়।
সোমবার দুপুরে খোরপশ বাবাদ টাকা দেওয়ার দিন ছিলো। টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আমার স্বামী মামুনুর রশিদ আমাকে জড়িয়ে ধরে আদালতের বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এসময় আমি বারান্দার লোহার রেলিং এর উপর দিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ার সময় তার জামা ধরলে সেও আমার সাথে তিন তলা থেকে নিচে পড়ে যায়।
অন্য দিকে স্বামী মামুন স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খোরপশের টাকা দিয়ে আদালত থেকে বের হলে তার স্ত্রী তাকে ধাক্কা দেয়। দুজনে নিচে পড়ে তার শরীর বিভিন্ন স্থান ক্ষত হয়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে আসা প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুরে হঠাৎ করে দেখি একজন যুবক একটি মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে তিন তলা থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় মেয়েটি ছেলেটার জামা ধরলে দুইজনই নিচে পড়ে যায়। পরে জানতে পারি তারা স্বামী স্ত্রী।
মামুনের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, মামুন তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে ভালোবাসে। সে তার স্ত্রী তালাক দিতে চাইনা। আজ আদালতে যৌতুক মামলা নি:স্পত্তির দিন ছিলো। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি নি:স্পত্তির নির্দেশ দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। তারপরেও মামুন তার স্ত্রী বুঝিয়ে সংসারে ফেরানোর চেষ্টার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে।
সীমার পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীকে জোর সংসার করানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এই ঘটনা নাকি ক্রোধের বসে তাকে ফেলে দিতে চেয়েছিল এটা তদন্ত হওয়া দরকার।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ভারপ্রাপ্ত ডা: মঞ্জুরুল হাসান জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত স্বামী স্ত্রীর অবস্থা আশংকা মুক্ত। তবে স্ত্রীর হাত ও স্বামীর মাজার হাড় ভেঙ্গে গেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।