বলিউডের তরুণ অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। একাধিক সিনেমায় কাজ করে নিজেকে মেলে ধরছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই বিশাল ধাক্কা। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে মাদক যোগের কারণে গ্রেফতার হন রিয়া। প্রায় এক মাস তাকে থাকতে হয়েছিল কারাগারে।
কেমন ছিল সেই অন্ধকার একটি মাস? দুর্বিসহ অভিজ্ঞতার কথা অবশেষে খোলামেলা জানালেন রিয়া। তিনি বলেন, ‘কোভিডের কারণে আমাকে ১৪ দিন আলাদা রাখা হয়েছিল। একটি রুমে আমি একা ছিলাম। কেবল খাবারের সময় জিজ্ঞেস করা হতো, খাবো কিনা। আমি খুব ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত থাকতাম; ফলে তারা যা দিতো, তাই খেয়ে নিতাম। খাবারে কেবল রুটি আর ক্যাপসিকামের সবজি দিতো। সবজি বলতে শুধু পানির মধ্যে ক্যাপসিকাম; কিন্তু স্বাদ নিয়ে তখন ভাবিনি।’
কারাগারে বন্দী থাকার ওই সময়ে মনোবল ধরা রাখতেন কীভাবে, সে প্রসঙ্গে রিয়া জানান, “অন্যান্য কয়েদিকে দেখে নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম। কারও পরিবারের সমর্থন নেই, কারও কাছে ৫-১০ হাজার রুপিও নেই জামিনের জন্য। সেই জায়গায়, আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমার পাশে ছিল। নিজেকে বলতাম, ‘তুমি ন্যয় বিচার পাবে, জামিন পাবে। কারণ তুমি কোনও অন্যায় করোনি।’ ওখানকার নারীদের দেখে অনেক কিছু শিখেছি। যেটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে অযথা চিন্তা করে কী লাভ!”
রিয়া জানান, কারাগারের অন্যতম কঠিন দিক হলো টয়লেট। তার ভাষ্য, ‘যেখানে ঘুমানোর জায়গা, সেটার পাশেই টয়লেট। অবশ্যই এটা ভালো কিছু নয়। কারাগারের অন্যতম কঠিন দিক এটা। আর কারাগারে শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে মানসিক যন্ত্রণাই বেশি।’
খাবারের প্রসঙ্গে আরেকটু ব্যাখ্যা দিয়ে রিয়া চক্রবর্তী বলেছেন, ‘কারাগারের ভেতরে একটি ক্যান্টিন আছে, সেখান থেকে বিস্কুট কেনা যায়। মাঝেমধ্যে ছোলা পাওয়া যেতো। প্রতি মাসে পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার রুপির একটা নির্দিষ্ট মানি অর্ডার নেওয়া যেতো। সেটা দিয়েই সারা মাসের খরচ মেটাতে হতো। ওই টাকা দিয়ে পানিও কেনা যেতো, যেটা কারাগারের ট্যাপের পানির চেয়ে অনেকটা ভালো। এই পানির পেছনেই আড়াই হাজার রুপি খরচ হয়ে যেতো।’
এমন দুঃসহ দিন কাটানোর পর যখন জামিন পেয়েছিলেন, কেমন লেগেছিল? এ প্রশ্নের জবাবে রিয়া বললেন, “আমি ওখানকার সব নারীকে বলেছিলাম, যে দিন জামিন পাবো, সেদিন তাদের জন্য আমি নাচবো। যদিও আমার ভাই জামিন না পাওয়াতে মন ভেঙে গিয়েছিল। তবু আমি নেচেছিলাম, কারণ এই মানুষগুলোকে আমি আর কোথায় পাবো! এই আশাহীন জীবনে যদি তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্য আনন্দ দিতে পারি, তাহলে সেটা দিতে চাই। সেজন্য আমি ‘নাগিন’ গানের তালে নেচেছিলাম। তারা সবাইও আমার সঙ্গে নেচেছিল। আমার ঘরে ফেরা দেখে তারা সবাই অনেক খুশি ছিল।”
বলা প্রয়োজন, ২০২০ সালের ১৪ জুন নিজ ফ্ল্যাট থেকে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যা গোটা বলিউডকে নাড়িয়ে দেয়। তার মতো সম্ভাবনাময়, জনপ্রিয় তরুণ তারকার এমন অকাল মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রিয়ার। সেই সূত্রে তার দিকে অভিযোগ ওঠে।
এক পর্যায়ে রিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে তাকে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ভাই সৌভিক চক্রবর্তীসহ গ্রেফতার করে ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। প্রায় এক মাস কারাগারে থাকার পর জামিন পান তিনি। তবে তার ভাই জামিন পায় তিন মাস পর।