দলের স্বার্থে নিজ গাড়ি, দোকান, সম্পদ বিক্রি করে নির্বাচনে গিয়েও পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব থেকে অবহেলিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এসব কথা জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা।
নির্বাচনে জাপার পরাজিত প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা দলের স্বার্থে নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু পার্টি থেকে আর্থিক ও মানসিক সাহায্য পাইনি। চেয়ারম্যান-মহাসচিব আমাদের খোঁজখবর রাখেননি। ফোন করলে ফোন ধরেননি। নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ করা টাকা দেননি। স্বজনপ্রীতির কারণে ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করেছেন। জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে না যেতো, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু হতে পারতো।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, আপনারা সমঝোতা করলেন, ২৬টা সিট পেলেন, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এখানে সরকারের কোনও ব্যর্থতা নেই। সরকার আপনাদের ভরপুর দিয়েছে। আমরা জানি, বাবলা ভাই জানেন, খোকা সাহেব জানেন; যখন শেরীফা কাদেরের (জি এম কাদেরের স্ত্রী) সিটটা কনফার্ম হয়নি, তখন জি এম কাদের বললেন, ‘আমি ভোটে যাবো না’। যখন স্ত্রীর সিটটা দিয়ে দিলো, তখনই জি এম কাদের দৌড়ে চলে গেলেন নির্বাচনি মাঠে।
দলের প্রার্থীদের নির্বাচনের অর্থ দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে সেন্টু বলেন, আমি তাকে (মহাসচিব) বললাম, যা-ই পান, কিছু কিছু দেন। মহাসচিব বললেন, ‘টাকা পেয়েছি, কিন্তু অল্প’। তিনি চেয়ারম্যানের স্ত্রীর কাছে একটা অ্যামাউন্ট দিয়ে চলে গেলেন নির্বাচনি এলাকায়। কোনও প্রার্থীকে তিনি কিছু বলেননি। মহাসচিব বললেন, ‘সেন্টু, এটা শরীফা কাদের দেখবেন।’
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, আমরা কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সভা করছি না। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চাই। কিন্তু কিছু লোক চেয়ারম্যানকে কুক্ষিগত রেখেছে। যাদের কোনও নেতাকর্মী নেই। তারা নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখতে পার্টির মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।
স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহিনুর সুলতানা লিমা বলেন, নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে শেরীফা কাদেরকে প্রেসিডিয়াম মেম্বার বানানো হলো কেন, এটার জবাব চাই। তার জন্য এতগুলো নেতাকে কেন বলি দেওয়া হলো? জাতীয় পার্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিকৃষ্ট মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। আমি তাকে অনার করি না। আমি জেনেই এসেছি আমাকে বহিষ্কার করা হবে। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের জাপা নেতা মুখতার হোসেন বলেন, রক্ত-মাংস, দোকানপাট বিক্রি করে নির্বাচন করেছি। স্বতন্ত্র ও নৌকার লোকদের হামলার মুখে জীবন যায়, কিন্তু দলের কোনও সহযোগিতা পেলাম না। একটু দেখা পর্যন্ত দিলেন না। তারা আমাদের বরাদ্দ করা টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রতারক দাবি করেন নোয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করা জাপার প্রার্থী ফজলে এলাহী সোহাগ বলেন, আমি নির্বাচনের সময় মহাসচিবকে শতাধিকবার ফোন দিয়েছি, কিন্তু তিনি ধরেননি। তিনি একজন প্রতারক ও বাটপার। তিনি সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমাদের প্রার্থীদের না দিয়ে নিজের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, হাসান ইফতেখার, মিজানুর রহমান মিরু, সাহিন আরা চৌধুরী রিমা, সুজন দে, শাহনাজ পারভিন প্রমুখ।