রমজানের আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সময়ে একটি ধাপে নির্বাচন উপযোগী কিছু উপজেলার নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানান। এদিকে আগামী সপ্তাহে কমিশন সভায় সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের বিষয়টি তোলা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। কমিশনের সায় মিললে ফেব্রুয়ারিতে তারা সংরক্ষিত আসনের ভোট করতে চান বলেও জানান অশোক দেবনাথ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রশ্নে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলার তালিকা তারা হাতে পেয়েছেন। সে অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য কমিশন সচিবালয় প্রস্তুত আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। রোজা শুরুর আগেই উপজেলার ভোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
রোজার আগে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্ভাবনা রয়েছে। সবই নির্বাচনযোগ্য। কারণ, আপনারা জানেন ২০১৯ সালের মার্চের দিকে উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন করতে হয়। সে হিসাবে সবই নির্বাচনযোগ্য হয়েছে।’
মাঝখানে রোজার আগে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, ‘সব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। আমাদের দেশে রোজার মধ্যে নির্বাচন হওয়ার নজির কম রয়েছে। কমিশন অনুমোদন দিলে প্রথম ধাপ রোজার আগে শুরু হয়ে বাকিগুলো রোজার পরে হতে পারে।’
কত ধাপে উপজেলা নির্বাচন হবে সেটি কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। ধাপে ধাপে ভোট হওয়ার পূর্ব নজির যেহেতু রয়েছে, সেক্ষেত্রে ধাপে ধাপে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইসির এই অতিরিক্ত সচিব।
দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সবশেষ ২০১৯ সালের ১০ মার্চ শুরু হয়েছিল উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। পাঁচ ধাপের এই ভোট শেষ হয় জুন মাসে।
আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন থেকে। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন নিয়ে যা জানালো ইসি
আগামী সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল হতে পারে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সংসদ থেকে আমরা সংসদ সদস্যদের ভোটার তালিকা পেয়েছি। ভোটার তালিকা যেভাবে প্রকাশ করা হয়, সেভাবে সংসদে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশ হওয়ার পর যদি কোনও আপত্তি না থাকে, সেটাই ভোটার তালিকা হবে। পরবর্তীকালে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা হবে। ’
কবে নাগাদ তফসিল হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে আমরা এটি কমিশনে ওঠাবো। কমিশন অনুমোদন দিলে তফসিল ঘোষণা হবে। আগামী সপ্তাহে তফসিল হলে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে।’
৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের বণ্টনটা কীভাবে হবে? জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘এটি তো রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত হবে। কীভাবে হবে এ ব্যাপারে কমিশনের তেমন কোনও বক্তব্য নেই। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেবো, দলগুলো কোটা অনুযায়ী কতটি পাবে, সে ব্যাপারে বলে দেওয়া হবে।’
রাজনৈতিক দলের কোটা তো স্পষ্ট। কিন্তু স্বতন্ত্ররা যদি এক না হয়, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেবো, স্বতন্ত্রদের নয়। স্বতন্ত্রদেরটা কীভাবে হবে সেটি পরে দেখা যাবে। এই মুহূর্তে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না।
কোনও দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী জোট করেছে এমন কোনও তথ্য এখনও কমিশনকে জানানো হয়নি বলেও জানান তিনি।
জোট করা ছাড়া তো স্বতন্ত্রদের আসন বণ্টন করতে পারছেন না? জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এটা কঠিন হবে। সেটা তো তারা সিদ্ধান্ত জানাবে, তারপর করা হবে। এটি পলিটিক্যাল বিষয়, এই বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই।’
তাহলে কি আপাতত স্বতন্ত্রদের ভাগের ১০টি সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বাকি ৪০টির জন্য তফসিল ঘোষণা করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি পরে দেখা যাবে। তারা যদি কিছু না জানায়—তখন সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারা না জানালে কী হবে, এ প্রশ্নে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘এই মুহূর্তে তো কিছু বলা যাচ্ছে না। কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে হবে।’
যদি জোট না হয়, আপনারা তাদের চিঠিও দিচ্ছেন না—সে ক্ষেত্রে তাদেরটা বাদ দিয়েই কি আপনারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যাবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে অগ্রিম কিছু বলতে পারছি না।’