ব্যাংকসহ চারটি খাত সংস্কার জরুরি। অন্য খাতগুলো হলো-মুদ্রা বিনিময় হার, রাজস্ব নীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক’র সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সংস্কারের বিষয় উঠে আসে। এজন্য সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
বৈঠক শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক জানান, নতুন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ‘ভালো বৈঠক’ হয়েছে। বাংলাদেশকে সহায়তার বিষয়টি আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি। এ সহায়তা অনেক বড় পরিসরে ও জোরালোভাবে আছে। সহায়তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে অর্থায়নের পাশাপাশি আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও সহায়তার বিষয়ে আমরা আলাপ করেছি। এখানে সংস্কারগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। আমাদের প্রতিশ্রুতিতে আরও ১৬ বিলিয়ন অর্থায়নের আলোচনা আছে।
এর আগে বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, পরিচিত হওয়াই ছিল সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অনেক বেশি সদিচ্ছা তাদের রয়েছে। বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তারা সহায়তা করতে চায়। আমাদের আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ায় তারাও সহায়তা করতে প্রস্তুত। এখন দেখা যাক-কতটুকু কী করা যায়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আমিই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। রোহিঙ্গারা তো এখনো রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়। কোন কোন জায়গায় সহায়তা দরকার-জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্বব্যাংক অব্যাহত রাখবে।
প্রবৃদ্ধি হলেও বিনিয়োগে ধীরগতি : এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে ধীরগতি আছে। দেশটির অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ অর্জন হবে। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বৈঠক করেন। নির্বাচনের পর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান-অর্থনৈতিক সংকটের মুখে নিয়মিত অর্থ পাওয়ার বাইরে আরও প্রত্যাশা আছে কিনা।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তো প্রত্যাশা করি। কিন্তু এডিবির অর্থায়ন প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশকে সংস্থাটি সহায়তা করছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি নিয়ে তারা বলছে-চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের একটু নিচে আছে। এটি পরে আরও বাড়বে। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে-এ বিষয়ে কিছু করবেন কিনা জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সমন্বয় করা হবে। এজন্য সময় দিতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে জানতে চাওয়া হয়-বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মুখে বাংলাদেশকে এডিবি কিভাবে সহায়তা করতে পারে। জবাবে তিনি বলেন, নতুন সরকার বৈদেশিক মুদ্রার ভালোনীতি খুঁজবে বলে আশা করছি। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট পূরণে মুদ্রার নীতি কাজ করবে এবং সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর এডিবি বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। শেষ বছরেও ৮০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা হিসাবে দিয়েছে এডিবি। যা সরাসরি রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এছাড়া অন্যসব খাতে এডিবি সহায়তা করছে।
নির্বাচনের পর এ সরকারের প্রতি আস্থা ঠিক আছে কিনা আপনি কি মনে করেন-জবাবে কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, নির্বাচনের আগে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর সেগুলো আর নেই, সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে।