বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন সকল দম্পতিরই থাকে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এক দম্পতি। একসাথে চার সন্তান ভুমিষ্ঠ হবার পর আনন্দে আত্মহারা ছিলেন মেহেরপুরের গাংনীর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের হাসান। কিন্তু সেই আনন্দ মিলিন হয়ে গেছে নিমিষেই। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে তিনটি সন্তানের অকাল মৃত্যু হয়েছে।
একদিকে তিন সন্তান হারানোর বেদনা অন্যদিকে অসুস্থ এক সন্তানের ব্যায় বহুল চিকিৎসা। সেই সাথে দেনার ভারে জর্জরিত হাসান এখন কিংকর্তব্য বিমূঢ়। কিভাবে সদ্যজাত সন্তানের চিকিৎসা করাবেন তা নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। এখনও কেউ এগিয়ে আসেনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। তবে সমাজ সেবা বলছে সহযোগিতা চাইলে তার সন্তানকে চিকিৎসা সহযোগিতা করা হবে।
হাসান জানান, পরপর দুবার অকাল গর্ভপাত ঘটেছিল স্ত্রী রজনী খাতুনের। পরের বছর আবারো গর্ভধারণ করেন তিনি। নানা পরিক্ষা নিরিক্ষার পর জানা যায় রজনীর গর্ভে রয়েছে চারটি সন্তান। শুধু হাসানের পরিবারই নয়, প্রতিবেশিরাও বেশ আনন্দে উচ্ছাসিত। নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করান হাসান। সন্তানের মুখ দেখার জন্যও পাগল প্রায় স্ত্রী রজনী। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসান তার স্ত্রী রজনীকে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে রজনীকে পাঠানো হয় ইউনিহেলথ স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালে।
গত পহেলা জানুয়ারি রজনীর কোল জুড়ে আসে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। নাম রাখা হয় রেজয়ান, রাইয়ান, রাফসান ও সুমাইয়া। ওই রাতেই সুমাইয়া মারা যায়। ৭ জানুয়ারী মারা যায় রাইয়ান ও রাফসান। সন্তান প্রসবের আনন্দ বেদনা নিমিষেই বিষাদে পরিনত হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা চলতে থাকে রেজওয়ানের। এক সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক কিছুই বিক্রি করতে হয় হাসানকে। সেই সাথে অন্ততঃ আড়াই লাখ টাকা ধার দেনা করতে হয়েছে তাকে।
হাসানের স্ত্রী রজনী খাতুন বলেন, সন্তানের মুখ দেখে আনন্দ হয়েছিল কিন্তু সেই সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনাই। অনেক ধার দেনা করে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে। এখন একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা অন্যদিকে দেনার ভার। এখনও কেউ কোন সহযোগিতা করেনি। কেউ একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সন্তানের চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো।
প্রতিবেশি বেগম খাতুন ও জোহরা খাতুন জানান, হাসান অত্যন্ত গরীব ও অসহায়। রজনী চার মাস অন্তঃস্বত্তা থাকাকালীণ সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেনায় জর্জরিত। এর মধ্যে তিনটি সন্তান মারা গেছে। একটি ছেলে বেঁচে আছে। তার ভাল চিকিৎসা করা জরুরী। কোন আয় রোজগার নেই তার। সন্তান হারানোর শোকের পাশাপাশি এখন দেনাদাররা পাওনা পরিশোধে চাপ দিচ্ছে। এদের পাশে কেউ নেই। সরকারী সহযোগিতা পেলে পরিবারে একটু স্বস্তি আসতো।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জানান, হাসানের স্ত্রী রজনী গর্ভে সন্তান ধারণের পর থেকে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। স্থানীয়ভাবে অনেকেই তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা পয়সা দিয়েছেন। কেউবা দিয়েছেন ঋণ। তার স্ত্রীকে ঢাকাতে পাঠানোর পরও খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। তার তিনটি সন্তান মারা গেছে। এখন একটির চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য ইউএনও ডিসি সাহেব বরাবর আবেদনের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ওই পরিবারটিকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত। প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের শাখা রয়েছে। সেখানে হাসান যোগাযোগ করলে সহযোগিতা পাবেন। তাছাড়া হাসান তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য আবেদন করলে সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন এই কর্মকর্তা।