আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাবো। ইতোমধ্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে— এটাই আমাদের লক্ষ্য।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জার্মানের মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে’ অংশ নেওয়ার বিষয়ে দেশবাসীকে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে একমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে একটা দেশ উন্নত হয়। গত ১৫ বছরে আমরা দেশটাকে যে উন্নত করতে পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের মন-মানোসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য— সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আগামী ৫ বছরে আমাদের কাজ হবে এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যেহেতু যাত্রা শুরু ২০২৬ সালে, যে সময়টুকু পাবো উন্নয়নশীল দেশ এটাকে যথাযথভাবে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেই কাজটা করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কমিটি করেছি, সবই করছি। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি-একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামি, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। ভোটের অধিকার, এমনকি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গেছে তাদেরও ভোটের অধিকার দিয়েছে এবং দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও পার্লামেন্টে এনে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া বসিয়েছিল।
তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকে না। তাদের শেকড়ের সন্ধানটা কোথায়? তাদের চিন্তা-চেতনা এমন একটা পরিবেশ হোক তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ এর নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণা সব দিক থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান এই রকম একটা ভাব ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর আছে এটা কিন্তু অপপ্রচারের কারণে অনেকটা ঢেকে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা গেলো, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারেনি। নির্বাচনের রেজাল্টটা কী? আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেলো ৩০০ সিটের মধ্যে। বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোট নিয়ে পেলো ৩০টা আসন। এরপর থেকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা।
বারবার সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার সামনে এটাই থাকবে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাকে যে আমরা স্থায়ী করেছি যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের কী দেখি? জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন, রেলে আগুন, বাসে আগুন! এটাই করে যাচ্ছে। এটা তো মানুষকে সেটা দেখতে হবে কারা মানুষের পাশে আছে। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আর রাজনীতি যদি ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা হলে তো মানুষ কিছু পাবে না।