মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম। পেশায় একজন নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার। শখের বসে প্রথমে দশটি স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে চাষ করেন। সেই শখ থেকেই পরবর্তীতে দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তার এই উদ্যোগে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার অনেকের। জমিতে প্রতিদিন কাজ করছেন বিভিন্ন বয়সের বেশ কিছু মানুষ। বসত বাড়ির পাশে স্ট্রবেরি বাগানে কর্মসংস্থান হওয়ায় খুশি এলাকার দিনমজুররা।
শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন স্ট্রবেরি বাংলাদেশেও সবার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ। গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি ফলের রস। শখের বসে বাড়ির টবে বা ছাদ কৃষিতে চাষ করলেও এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন। তাদেরই একজন মঞ্জুরুল ইসলাম।
প্রথমে ছোট পরিসরে বাড়ির ছাদে স্ট্রবেরি চাষ করলেও এ বছর দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। রাজশাহী টিস্যু কালচার থেকে স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করে নভেম্বরের মাঝামাঝি জমিতে চারাগুলি লাগিয়েছেন। জানুয়ারির মাসের প্রথম থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।ইতোমধ্যে দুই লক্ষ টাকার স্ট্রবেরি চারা এবং প্রায় ছয় লক্ষ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। তার আশা আরো ছয় লক্ষ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি হবে এই জমি থেকে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফল সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতি কেজি ফল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এগুলি চাষ করেছেন তাই লোকজন অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে ফল কিনছে বলে জানান। মার্চ মাস পর্যন্ত গাছগুলি থেকে নিয়মিত ভাবে ফল পাওয়া যাবে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মাঝেও এ চাষ করার আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় চাষী হাফিজুল বলেন, জেলাতে স্ট্রবেরি প্রথম চাষ। ফলটি দেখতে লোভনীয় এবং খেতেও অত্যান্ত সুস্বাদু। লাভজনক একটি ফসল। মঞ্জুরুল ভাইয়ের পরামর্শ নিতে এখানে আসা। আগামীতে আমিও এই চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্ট্রবেরি ক্ষেতে কাজ করা জিয়াউর রহমান বলেন, আমি তিন মাস ধরে এখানে কাজ করছি। নতুন ফসল হিসেবে অনেক চাহিদা। প্রতিদিন সকাল বিকাল এই ফল তুলি। অন্য কাজের পাশাপাশি এখানে শ্রম দিচ্ছি। আমাদের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।
স্ট্রবেরি চাষি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শখ থেকেই মূলত স্ট্রবেরি চাষ শুরু। পেও চাষটি বাণ্যিজিকভাবে করতে রাজশাহী টিস্যু কালচার থেকে চারা সংগ্রহ করে পরবর্তীতে দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করি। সবমিলিয়ে আমার আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এতে আমি প্রায় দুই লক্ষ টাকার চারা বিক্রি করেছি। সকল খরচ বাদ দিয়ে ছয় লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে মাঠে যে ফল আছে তাতে এখনও ছয় লক্ষ টাকার বিক্রি হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যান্ত একটি সমৃদ্ধ জেলা। এখানে উন্নতমানের ও বিদেশী ফল কৃষকরা চাষ করছে। স্মার্ট কৃষক যাদেরকে আমরা বলি। এখানকার কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অনেক আগ্রহী। তেমনি মেহেরপুর জেলাতে এবছরই প্রথম মুজিবনগরের একজন কৃষক দেড় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছে। এই ফল অত্যান্ত পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের একটি ফসল। স্ট্রবেরি চাষে তিনি সফল হয়েছেন। বাজার মূল্যও তিনি ভালো পাচ্ছেন। আশাকরি এই স্ট্রবেরি চাষ দেখে এই জেলাতে আরও চাষ হবে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষি বিভাগ সবসময় তাদের পাশে আছে।