থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতে মামলা
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় শাহনাজ বেগম নামের এক মহিলাকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী আব্দুল মজিদকে প্রধান আসামী করে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আব্দুল মজিদসহ আরও আটজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে শাহনাজ বেগমের নানা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) শাহনাজ বেগমের নানা খোরশেদ আলম বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ আমলী আদালত-২, মামলাটি দায়ের করে।
তিনি বলেন, পুলিশ লাশ থানায় নিয়ে যায় পরে আমরা মামলা করতে থানায় যাই কিন্তু থানার পুলিশ আমাদের সাথে খারাপ আচরন করে। মামলা নেয়নি। তাই আদালতে মামলা করছি। আশাকরি ন্যায় বিচার পাবো।
তিনি আরও বলেন বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২২ এপ্রিল আদেশের জন্য দিন নির্ধারন করে। মামলার বাদী খোরশেদ আলম দেবীগঞ্জের টোকরাভাষা কইপাড়া এলাকার মসলিম উদ্দিনের ছেলে।
আদালত দাখিল করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শাহনাজ বেগম বাদী খোরশেদ আলীর মেয়ের ঘরের নাতিনী। মেয়ে জামাই শাহ আলম মারা যাওয়ার পর নাতিনী শাহনাজ বেগমকে লালন পালন করে। ২০১৮ সালে দেবীগঞ্জ উপজেলার টোকরাভাষার মতিয়ার পাড়া এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে প্রধান আসামী আব্দুল মজিদের সাথে সরকারী রেজিষ্ট্রি মূলে বিয়ে দেয়।
শাহনাজ বেগম তার স্বামীর সংসার করা কালীন সময়ে তার স্বামী আব্দুল মজিদ, মৃত কালু মিয়ার ছেলে আব্দুল জব্বার, মৃত সুলতান আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম মিলে শাহনাজ বেগমের উপর যৌতুকের জন্য প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। শত নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর সংসার করা কালীন সময়ে ২টি সন্তানের মা হয় শাহনাজ বেগম।একজনের বয়স ৫ বছর আরেক জনের ৪ মাস।
আব্দুল মজিদ অন্য আসামীদের প্ররোচনায় একলাখ টাকা যৌতুক দাবী করে ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে ভিকটিম শাহনাজ বেগম গত বছরের ৩ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। প্রধান আসামী আব্দুল মজিদ ভিকটিম শাহনাজ বেগমকে নিয়ে সংসার করার কথা বলে আপোষ করে আদালত থেকে জামিন লাভ করে।
আসামী আব্দুল মজিদ তার বাচ্চাসহ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যায় এবং সেখানেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। ভিকটিম শাহনাজ বেগমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। গত ৮ এপ্রিল মামলার প্রধান আসামী আব্দুল মজিদ তার স্ত্রী সন্তান সহ বাদীর বাড়ী খোরশেদ আলীর বাড়িতে আসে এবং পরের দিন ঈদের জন্য আব্দুল মজিদ তার স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যায়।
আসামী আব্দুল মজিদ অন্য আসামীদের সাথে যোগাযোগ করে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং ঈদের দিন ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে সাড়ে ৯ টার মধ্যে আসামীগন ঘটনাস্থলে একত্রিত হয়ে সু-পরিকল্পিত ভাবে প্রধান আসামী আব্দুল মজিদের শয়ন ঘরে ভিকটিম শাহনাজ বেগমকে ধারালো ছোরা দিয়ে গলায় লাগিয়ে দিয়ে জবাই করে। ভিকটিমের বাম হাতে, উরুতে, বুকে, পিঠে, পেটে ছুরিকাঘাত করে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সে সময় এলাকার লোকজন ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে গেলে আসামীগন কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
আসামী আব্দুল মজিদ ভিকটিমের মাকে মোবাইল ফোনে মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। বাদী ঈদের নামাজ পরে বাড়ীতে আসে এবং স্ত্রীর মুখে শুনে দ্রুত মোটর সাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে যায়। বাদী গিয়ে দেখতে পান শাহনাজ বেগম মৃত অবস্থায় সাদা জামা এবং গোলাপী রং এর পায়জামায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পরে আছে। এ অবস্থা দেখে মামলার বাদী খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রীর কান্না কাটি ও চিৎকার চেচামেচি করলে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। মামলার বাদী খোরশেদ আলম বলেন, মোবাইল ফোনে খবর শুনে গিয়ে দেখি নাতিন জামাই আমার নাতিনিকে জবাই করে হত্যা করেছে।এসময় নাতিনিকে দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
মামলার বাদীর আইনজীবি এডভোকেট নজরুল ইসলাম জানান, মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২২ এপ্রিল আদেশের জন্য দিন নির্ধারন করে।