বর্তমনে ডাক বাক্স যেন এক সুদুর অতীত। এক সময়ের ডাক বাক্সের কদর আর আগের মত নেই। তবে এখনও দেশের কিছু কিছু জায়গায় দেখা মেলে ডাক বাক্সের। মুজিবনগর উপজেলা প্রধান ফটকের পাশে দেখা মেলে একটি ডাক বাক্সের। তাতে লেখা আছে ‘চিঠির বাক্স, খোলার সময়-সকাল-১০:৩০’।
দেখলেই যেন মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে চিঠির অপেক্ষায়। কিন্তু সময় বয়ে গেলেও চিঠিও আসে না আর বাক্সটিও খোলা হয় না। বর্তমানে ডাক বাক্সে চিঠি ফেলে দিয়ে কবে তার প্রিয়জন সেই চিঠি পাবেন এই অপেক্ষা এখন আর কেউ করেন না।
যেসব চিঠিতে প্রিয় মানুষের শব্দে-শব্দে অনুভূতি আর ভালোবাসা গাঁথা ছিল। কিন্তু সে যুগ এখন কেবল স্মৃতিতেই কোনো মতে টিকে আছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইলের যুগে মানুষের চিঠি লেখার সময় কই, ইচ্ছেটুকুও কি আছে!
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ডাকপিয়ন পায়ে হেঁটে বাড়িতে বাড়িতে চিঠি নিয়ে আসতেন। প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য তখন সবাই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকত। কুরিয়ার সার্ভিসের যুগে এসেও মানুষ চিঠি দিতে ভুলে যায়নি, যদিও ডাকপিয়নের সাইকেলের টুংটাং আওয়াজ আর শোনা যায় না।
এখন স্ত্রী স্বামীর কাছে, মা তার সন্তানদের কাছে কিংবা কোন তরুন তরুনী তার প্রিয় জনের কাছে চিঠি লিখে ডাক বাক্সে দিয়ে আসেন না। বর্তমান সময়ের মানুষরা তার প্রিয়জনের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রিয়জনের কাছে দ্রুত ভাব বিনিময় করা যায় সত্য কিন্তু প্রকৃত অর্থে লিখুনির মাধ্যমে তার আবেগতাড়িত ভালবাসার কথা তাতে তেমনভাবে ফুটে উঠে না। প্রিয়জনের কাছ হাতে পাওয়া সেই চিঠির জন্য অপেক্ষা কি যে মধুর তখনকার প্রিয়জনরাই তা অনুভব করতেন।
কথা হয় এ প্রবীন ব্যক্তি কামরুল হাসানের সাথে, তিনি জানান, সময় পাল্টে গেছে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে ডাকবিভাগগুলো, আমাদের মানসিকতাও পাল্টে গেছে। সময় নষ্ট করে আর কেউ যেমন চিঠি লেখেন না, তেমনি চিঠি অনেক দেরি করে প্রিয়জনের হাতে পৌঁছে যাক এটাও কেউ চায় না। কালের বিবর্তনে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে হাতে লেখা চিঠি আর জৌলুস ছড়ানো ডাক বাক্সের কদর। এখন ডাক বাক্সে সরকারি চিঠিপত্র ছাড়া আর কোন চিঠিই পাওয়া যায় না।