মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামের মাঠে ২৭ বিঘা জমি বিট্রিশ আমল থেকে থেকে চাষআবাদ করছেন শতাধিক কৃষক। এই ২৭ বিঘা জমি বিভিন্ন চাষআবাদ করে শতাধিক পরিবারের সংসার চলে আসছে।
হঠাৎ করে ফরিদ নামের এক ব্যাক্তি ১৯৪৪ সালের একটি জাল দলিল তৈরি করে আদালতে মামলা করে ২৭ বিঘা জমির দখল নিতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধলা গ্রামে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন জাল দলিল তৈরির সাথে জড়িত রয়েছে ধলা গ্রামের গ্রাম পুলিশ আব্দুল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মালেক। এই দুই জনের সহযোগীতায় ফরিদ এই জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন এই জমি বাপ-দাদা করে এসেছে এখন আমরা চাষ করছি। অনেকে তাদের নিজের নামে দলিল সহ খাজনা খারিজ করে প্রতি বছর সরকারকে নির্ধারিত ফি দিয়ে আসছেন। জানা গেছে, বিট্রিশ আমলে দেশ ভাগ হওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাংলাদেশে থাকা তাদের জমি বিনিময় করে ওপারে চলে যান। সেই থেকে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিনিময় সম্পত্তি ভোগদখলে থাকা ব্যাক্তিরা সরকারের সাথে মামলা চালিয়ে নিজেদের নামে দলিল করে বসবাস সহ চাষআবাদ করছেন।
সীমান্তবর্তী গ্রাম ধলার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এত বছর পর গ্রামের ফরিদ নামের এক ব্যাক্তি একটি ১৯৪৪ সালের দলিল নিয়ে এসে আমার সহ ২৭ বিঘা জমি তার পিতা তাকে লিখে দিয়ে গেছে বলে আদালতে মামলা করে দখলে আসার চেষ্টা করে। পরে আমরা জানতে পারি গ্রাম পুলিশ আব্দুল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মালেক এই জাল দলিল করে। আমার নিজের নামে ২৭ বিঘার মধ্য ০.৬৬ শতক জমির দলিল আছে। আমি ২০২০ সালে নাম খারিজ সহ খাজনা দিয়েছি সরকারকে। সেই সম্পত্তি এখন শুনছি ফরিদের। আমরাও আদালতে মামলা দিয়েছি। অনেকের সরকারের সাথে মামলা চলছে। অভিযোগ আছে গ্রাম পুলিশ তার চাচাতো ভাইয়ের জমিও জাল দলিল করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে।
ভুক্তভূগী ইনজারুল ইসলাম জানান, আমার দাদা, আমার পিতা এই জমিতে চাষ আবাদ করে আসছে। এখন আমি এই জমি চাষ করে জীবিকা নিবাহ করছি। হঠাৎ করে ফরিদ নামের একজন ১৯৪৪ সালের একটি জাল দলিল নিয়ে এসে জমির মালিকানা দাবী করেন। পরে আমি মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। আদালত এই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ উজির আলী বলেন, জমি আমার দাদা, আমার বাবা এখন আমি ও আমার ছেলেরা চাষ করছি। এই জমি থেকে শতাধিক পরিবারের লোকজন জীবিকা নির্বাহ করছে। এত বছর পর গ্রামের ফরিদ নামের এক ব্যাক্তি জমি নিজের দাবী করে দখল নিতে চাই। জমি ছাড়তে তারা প্রতিনিয়ত আমাদের উপর হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। এই জমিটুকুই আমার সম্বল। আমার জীবন থাকতে এই জমি আমি দখল হতে দেবো না। শেষ সম্বল হারানোর থেকে প্রয়োজনে আমি মরতেও রাজি আছি। আমাকে মেরে এই জমি তাদের দখলে নিতে হবে।
কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি এই জমি ভুক্তভূগীরা চাষ করে আসছে। শুধু আমরা না, এলাকার মুরুব্বীরাও সকলেই জানে। হঠাৎ শুনছি এই জমি নাকি ফরিদের। শুনেছি জমিতে চাষ করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এই জমির ঘটনা ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় আকারের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
রামকৃষ্ণধলা গ্রামের গ্রাম পুলিশ আব্দুল জানান, আমি কোন জমি দখল বা জাল দলিল তৈরির সাথে জড়িত না। আমি জমির বিষয়টি শুনেছি। আপনারা তদন্ত করে দেখেন আমি জড়িত কিনা। এছাড়া আমার চজাচা তো ভাইদের জমি ভুল করে আমার পিতার নামে নাম খারিজ হয়ে যায়। পরে আমরা সেটা সমাধান করেছি।
রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমার দুলাভাই এই জমির মালিক। তাদের বৈধ দলিল আছে। আমরা দখলে যাবো। এতদিন পর দখলে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন এখন আমার দুলাভাই জমির দলিল পেয়েছে তাই আমরা আদালতে মামলা করে রায় নিয়ে জমির দখলে গিয়েছিলাম। তাদের যদি কাগজ থাকে আদালতে পেশ করুক। জমির মালিকানা দাবী করা ফরিদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।