এক-আধটা নয়, তিন তিনটে কুমির ভেসে বেড়াচ্ছে কলকাতার গঙ্গায়! আর সেই কুমির আতঙ্কে শিকেয় উঠেছে গঙ্গাস্নান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ আহিরীটোলা ফুলপট্টি ঘাটের কাছে কুমিরের মতো একটি প্রাণী গঙ্গায় দেখা গেছে। সেটির দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে ছয় ফুট। সঙ্গে দুটো বাচ্চাও ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য।
বিভিন্ন সময়ে কুমিরগুলোকে একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে। গত দুদিন ধরে কলকাতা এবং হাওড়ার আশপাশে কুমিরের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতা রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে জানা গেছে, দিন চারেক আগে তারা মৎস্যজীবীদের কাছে জানতে পেরেছেন খিদিরপুরের কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গেছে।
গঙ্গার বুকে কুমিরের আতঙ্ক শুনে ঘুম ছুটেছে প্রশাসনেরও। কলকাতা রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। ওদিকে, কুমির-দর্শনের খবর শোনার পরেই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধান টিম তৈরি করেছে বন দফতরও।
রাজ্য বন দফতরের ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে মূলত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী এবং খাঁড়িতে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। কলকাতার গঙ্গায় আজ পর্যন্ত কোনোদিন কুমির দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, সুন্দরবন থেকে নদীপথে কলকাতায় কুমির চলে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতীতে ফারাক্কা এবং বর্ধমানের কালনার কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গিয়েছিল। তবে এটা সত্যি কুমির কি না, তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সে জন্য আমরা আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে খোঁজখবর নিচ্ছি। সত্যিকারের কুমির হলে সেটা চিন্তার বিষয়। কারণ, আমাদের কাছে কুমির ধরার মতো কোনও সরঞ্জাম নেই। সেক্ষেত্রে সুন্দরবন ডিভিশন থেকে এক্সপার্টদের ডেকে আনতে হবে।
কলকাতা রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কথায়, দিন চারেক আগে আমরা মৎস্যজীবীদের কাছে জানতে পারি, খিদিরপুরের কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গেছে। সেটা জানার পরেই আমরা বন দফতরকে খবর দিই। তারা আমাদের জানিয়েছে, ওটা সম্ভবত ঘড়িয়াল। এরা দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো। মুখটা ছুঁচালো হয়। তবে এটাই সেটা কি না, আমরা তা বলতে পারব না। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বন দফতরের সচিব বিবেক কুমারের বক্তব্য, কলকাতার গঙ্গায় কুমির রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও সুনির্দিষ্ট খবর নেই। তবে গত দুই-তিন দিন ধরে একটা ঘড়িয়ালকে হুগলির ভদ্রেশ্বর এবং কলকাতার আশপাশে গঙ্গায় ঘুরতে দেখা গেছে। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসাররা ইনস্পেকশন করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। ঘড়িয়াল খুব একটা বিপজ্জনক নয়। এরা মূলত নদীর মাছ খায়। একমাত্র ভয় পেলে তবেই তারা মানুষকে আক্রমণ করে।