ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এর গ্রাহক সংখ্যা ২০০৮ সালের ৪০ লাখ থেকে বেড়ে জানুয়ারি শেষে উন্নীত হয়েছে প্রায় ১২ দশমিক ৯২ কোটিতে। এই সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ডেনসিটি (ঘনত্ব) ৭৫ দশমিক ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
এ ছাড়া দেশে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথ চাহিদা মেটাতে ২০২৮ সাল নাগাদ চতুর্থ সাবমেরিন ও ২০৩৩ সাল নাগাদ পঞ্চম সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের ফলে গত ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ইন্টারনেটের মূল্য অনেক কমিয়ে ওয়েবভিত্তিক কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ প্রসারিত করা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ফিক্সড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা, বর্তমানে তা মাত্র ৬০ টাকা।
গ্রামীণ জনপদে এর সুফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ওয়ালেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১২ কোটির ওপরে। সারা দেশে ৯ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টারে ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা, যাদের ৫ হাজার ৩৪৪ জন নারী এবং সাড়ে আট হাজার পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারছেন। এ ছাড়া যেকোনও স্থান থেকে যেকোনও সময়ে সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৪০০-এর বেশি সেবাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লাখ স্মার্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। সে লক্ষ্য সামনে রেখে ২০৩১ সালের মধ্যে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, রোবোটিকস, সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রিক ভেহিকেল, স্পেস ও জিওস্পেশিয়াল প্রযুক্তিসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি-ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। আইসিটি খাতের রফতানির পরিমাণ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে।
এ খাতের অংশীজনদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিটি খাতে স্মার্ট হয়ে ওঠার মানদণ্ড তৈরির পাশাপাশি তৃণমূলসহ দেশব্যাপী উদ্ভাবন ও গবেষণাকে উৎসাহিত করতে পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি
দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিশ্চিতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এ লক্ষ্যে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ফাইভ-জির উপযোগীকরণে নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথ চাহিদা মেটাতে ২০২৮ সাল নাগাদ চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প ও ২০৩৩ সাল নাগাদ পঞ্চম সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
দেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ব্যাকবোন নির্মাণে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ৩৯ হাজার ২০০ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে এবং তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
৮ হাজার ৫০০ পল্লি পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল ডাক কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট পোস্ট অফিস গড়ার উদ্দেশ্যে দেশের ১৪টি স্থানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ১৪টি মেইল প্রসেসিং সেন্টার নির্মাণ পালন করবে।