মেহেরপুরের গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রধান শিক্ষক (অধ্যক্ষ) আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বুধবার (১২ জুন) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক নীল কমল পাল বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
দুদক সুত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেছেন তার সাথে বাস্তব সম্পদ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার দুদকের কাছে লুকিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করায় তার বিরুদ্ধে বিচারের নিমিত্বে মামলাটি দায়ের করেছে দুদক।
মামলায় অভিযোগের বিবরণীতে জানা গেছে, আফজাল হোসেন তার নিজের আয়ের টাকা দিয়ে বাঁশবাড়ীয়া মৌজায় স্ত্রী সেলিনা আক্তারের নামে ৮.২৫ শতক জমি ক্রয় করেন ২০১০ সালে। জমির দলিল মূল্য দেখানো হয় ৪০ হাজার টাকা। ওই জমিতে ২০১২ সালে নির্মান করা হয় দ্বিতল একটি বাড়ি। আফজাল হোসেন ও তার ছোট মেয়ে সুজানা পারভীনের নামে মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এ তথ্যও তিনি গোপন করেছেন।
আফজাল হোসেন দুদকে যে আয়ের বিবরণী দিয়েছেন তাতে বাড়ি নির্মান ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুজন প্রতিনিধি আফজাল হোসনকে সাথে নিয়ে প্রকৃত নির্মান ব্যয় নির্ধারণ করেছেন ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৩ টাকা। অর্থাৎ বাড়ি নির্মান কাজের প্রকৃত ব্যয় তিনি গোপন করেছেন। এছাড়াও সম্পদের বিবরণীতে আফজাল হোসেন তার নিজ নামীয় ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমার তথ্য গোপন করেছেন। গাংনীর দুটি ব্যাংকে তার একাউন্টে পাওয়া গেছে এক লাখ ৯২ টাকার স্থিতি।
আফজাল হোসেন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেছেন তাতে গোপন করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৯ টাকা। মামলার আর্জিতে সার্বিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, আফজাল হোসেনের মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮০ টাকা। তার চাকুরির বেতন ভাতাদিসহ আর্থিক সুবিধা আয়, গৃহসম্পতি আয় ও কৃষি আয় রয়েছে। যার মাসিক আয় হিসেবে করে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৬ টাকা।
এ সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কোন প্রকার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এ টাকার সম্পদ অর্জন করে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যার বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি রেকর্ড করেছেন দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের উপসহকারি পরিচালক সৈয়দ মাইদুল ইসলাম। দুদক আইনে মামলাটির বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে দুদক সুত্রে জানা গেছে।
মামলার বাদি দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক নীল কমল পাল মামলার বিষয়ে বলেন, মামলাটি তদন্ত হওয়ার পর আদালতে চার্জশিট যাবে।