শতবর্ষী বারাদি ছাগলের হাট
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মেহেরপুর জেলা সদরের বারাদিতে জমে উঠেছে শতবর্ষী ছাগলের হাট। গরুর হাটের পর এবার ছাগলের হাটেও স্বস্তিতে নেই প্রান্তিক খামারিরা। বিপুল পরিমাণ ছাগল ও ভেড়া আমদানি হলেও তার বিপরীতে সাধারণ ক্রেতা এবং বাইরের ব্যাপারীর সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে হাটে ছাগল তুলে দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই হাটের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। সারা বছর হাট বসলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর ছাগলের আমদানি হয়। এটিই বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাগলের হাট। এখানে সপ্তাহের শনি ও বুধবার ছাগলের হাট বসে। বছর জুড়েই ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম থাকে হাটটিতে। হাটে আনা ছাগল যেন অসুস্থ না হয় এবং কেউ যেন অসুস্থ ছাগল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডাক্তার ও কোন ক্রেতা-বিক্রেতারা যে জাল টাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা সর্বাক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন।
মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। মেহেরপুরের পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা এই ব্ল্যাকবেঙ্গলকে জেলা ব্র্যান্ডিং করেছে। দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংস, মাংসের ঘনত্ব ও উন্নতমানের চামড়ার জন্য ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল বিশ্বখ্যাত। দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মেহেরপুরের বারাদিতে ছাগলের এ হাট থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কিনে নিয়ে যান। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এবার হাটে উঠেছে রাম ও যমুনাপাড়ি জাতের বড় বড় ছাগল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজবাড়ি, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন এ হাটে। কালো ও লালচে রঙের ছাগলের চাহিদা বেশি। জাত ভেদে ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা মূল্যের ছাগল উঠেছে হাটে। তবে মাঝারি ধরনের ছাগলের ক্রেতা বেশি। বড় ও দৃষ্টিনন্দন ছাগল হাটে এনে বিপাকে পড়েছেন অনেক বিক্রেতা। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে আসছেন কোরবানির ছাগল কিনতে। তবে দাম নাগালের বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক ক্রেতা। হাটে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী ব্লাক বেঙ্গল, বিদেশি জাতের ছাগল ও ভেড়া এবং গাড়ল বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম হওয়ায় লোকসানেই ছাগল বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানালেন প্রান্তিক খামারি ও স্থানীয় ব্যাপারীরা। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকজন বেপারী কেনাকাটা করলেও অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক ছাগল ও ভেড়া। ছাগলের পাশাপাশি হাটে ভেড়াও পাওয়া যায়। দেখা যায়, অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভেড়া। কিন্তু গলায় কোনো রশি নেই। ভেড়ার মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, বড় ভেড়াটিকে ধরে রাখলেই চলে। একে ঘিরে থাকে অন্য ভেড়ারা। ভেড়ারা রশিতে বাঁধা ভেড়াকে ঘিরে অবস্থান করে সব সময়। এটা ভেড়ার সহজাত ধর্ম।
ঢাকা থেকে আগত ছাগল ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, কোরবানির সময় এ অঞ্চলের হাটে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়। আমরাও এখানে আসি ছাগল কিনতে। এখানে সারা বছরই ছাগল পাওয়া যায়। তবে ঈদের আগে ভালো মানের ছাগলের সরবরাহ বেশি থাকে।
সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের স্থানীয় ছাগল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরসহ আশপাশ এলাকার সবচেয়ে বড় ছাগলের হাট বারাদি হাট। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর সংখ্যক ছাগল আমদানি হয় এই হাটে। আমরা গ্রাম এলাকা থেকে ছাগল কিনে এই হাটে বাইরের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করি। অনেকে কোরবানির জন্যও কিনে নিয়ে যান। ঈদের সময় একটু বাড়তি আয়ের জন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে জোর দিয়ে ব্যবসা করি। এ বছর অন্যবারের মতো ব্যবসা হচ্ছে না। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। দেখা যাক কোরবানির আগ পর্যন্ত কী হয়।
হাটে ছাগল কিনতে আসা মেহেরপুর শহরের রিকু বলেন, প্রায় ১ ঘন্টা আগে হাটে এসেছি। হাটে বড় ছাগলের আমদানি খুবই বেশি। আমি মাঝারি দুটি ছাগল কেনার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু মাঝারি ছাগলের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি।
আলমপুর গ্রামের ছাগলের বেপারী কমর উদ্দিন ৪০ কেজি করে দুটিতে দুই মণ মাংস হবে এমন খয়েরি রঙের দুটি ছাগল হাটে তুলেছেন। ছাগল দুটি ঢাকার এক ব্যাপারীর কাছে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
হাটের ইজারাদার মো. ইসরাফিল বলেন, এখানে প্রতি হাটে ৪ থেকে ৫ হাজার ছাগল আমদানি হয়। ঈদের আগ মূহুর্তে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার ছাগল আমদানি হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ হারিছুল আবিদ জানান, মেহেরপুর জেলায় কোরবানিযোগ্য ছাগলের চাহিদা ৫০ হাজারের কিছু বেশি। তবে জেলায় কোরবানি উপযোগী ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি। উদ্বৃত্ত ছাগলগুলো বাইরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। যা ব্যাপারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে পৌঁছে যাবে।