একজন নিরাপত্তা প্রহরী মোসলেম আলী, আরেকজন পরিছন্নতা কর্মী বিপ্লব হোসেন, অপর জন এসিসট্যান্ট একাউনট্যান্ট অনুপ সাহা। তিনজনই কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছেন পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। নিজের কাজ না করে, কাজের ফাঁকি দিয়ে তারা কাজ করছেন অন্যটা।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। গণমাধ্যম কর্মীরা প্রায় ২ ঘন্টা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অবস্থান করে তাদের তিন জনের কাজের গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন।
পাসপোর্ট অফিসের মূল্যবান সেক্টর হলো পাসপোর্ট বিতরন শাখা। সেখানে রুমের ভিতরে চেয়ারে বসে কাজ করছেন নিরাপত্তা প্রহরী মোসলেম উদ্দিন। সংবাদকর্মীদের সামনে পাসপোর্ট অফিসে আসা কয়েকজন লোকজন তাকে অফিসের বড় কর্তা ভেবে সালাম দিয়ে বললেন স্যার দেখেন তো আমার পাসপোর্ট টা আসছে নাকি। এভাবেই একের পর এক লোক আসছেন আর মোসলেম উদ্দিনের নিকট থেকে স্লিপ নিয়ে পাসপোর্ট নিচ্ছেন।
দিনের বেলা অফিসে ডিউটি করেই তার কাজ শেষ হয়ে যায়। রাতের বেলা তিনি আর ডিউটি করেন না। ডিউটি না করেই যথারীতি সরকারি বেতন ভাতা নিচ্ছেন। অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরেকজন হলো বিপ্লব হোসেন, তিনি রয়েছেন পরিছন্নতাকর্মী হিসেবে। শুধু মাত্র অফিসের বিভিন্ন রুম আসবাবপত্র পরিছন্নতা রাখাই তার কাজ। তিনি কিন্তু কাজ করছেন ঠিকই তবে কিছু উপরি কমিশন পাওয়ার আশায় করছেন অন্য কাজ। পাসপোর্ট করতে অফিসে আসা বা কাগজপত্র জমা দিতে আসা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে সাথে সাথেই তিনি তাদের ফাইল হাতে নেন৷ তারপর দেখেন কোন ভুলত্রুটি আছে নাকি। যদি থাকে তাহলে চলে দেনদরবার। হবে না, ঠিক করে নিয়ে আসেন। নানা অজুহাত। হাতে কিছু ধরিয়ে দিলেই সব ভূল পার পেয়ে যায়।
পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনেরা হয়রানীর শিকার হন বাহিরে। পাসপোর্ট অফিসের ঘেষা রয়েছে কয়েকটি অনলাইন কম্পিউটারের দোকান৷ কাগজপত্রে কিছু সমস্যা থাকলেও পার পেয়ে যায়। পাসপোর্ট অফিসের লোকজনের কল্যানে। বিনিময়ে কিছু হাদিয়া নেন তারা। বাহিরের দোকানদারের মাধ্যমে বেশির ভাগই জমা হয় অফিসে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসে ঘুরাফেরা করার পর বিষয়টি লক্ষ করা যায়। সংবাদকর্মীরা অফিসে অবস্থান করার কারনে দালালরা ফাইল বা আবেদন পত্র জমা দিতে পারেনির। পরে পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের দিয়েই আবেদন জমা করানো হয়।
অন্যজন হলেন, সহকারী একাউনট্যান্ট অনুপ সাহা। অফিসের একাউন্টের কাজে নিয়োজিত থাকলেও বেশির ভাগ কাজ করেন পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের আবেদন পত্র যাচাই বাছাই করা৷ যদিও তার কাজ এটা না তারপরেও হরহামেশা তিনি করেই যাচ্ছেন। কোন ভূলত্রুটি থাকলে টাকার বিনিময়ে পার দেন ফাইল। প্রায় দিন গড়ে ৪০/৫০ টি পাসপোর্ট অফিসে ফাইল জমা। এসব ফাইল হাতে আসা লোকদের দেয়ার অর্থ অফিসের কর্তাদের কাছে চলে যায়।
পাসপোর্ট অফিসের এ তিনজনের সাথে রয়েছে বাহিরের দোকানদার দের সাথে সু সম্পর্ক। সিষ্টেম যা চলে বাহিরেই চলে। সিষ্টেম হয় সব টাকার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে হয় সব কাজ।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমাদের অফিসে জনবল সংকট থাকার কারনে এমন অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা তিনজনই নিজেদের কাজ করেও অন্য বিভাগের কাজ করছে। এতে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনরা উপকৃত হচ্ছে। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনেরা এখানে এসে হয়রানির শিকার হয়না।