শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথম দিন (১ আগস্ট) বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড।
‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’—এই স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মতপ্রকাশ করেন শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, শমী কায়সার, ফেরদৌস, রিয়াজ, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, নিপুণ, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, শুভ্র দেব, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই।
বিটিভিতে এ ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা? এমন প্রশ্ন তুলে এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তারা।
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সেই কোটার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম, কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলবো কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেলো সেগুলো আর আমরা আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদের খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে। তাদের বিচার চাই। আজ আমরা সব অঙ্গনের শিল্পীরা এখানে একত্রিত হয়েছি, আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।’
শমী কায়সার বলেন, ‘সকল সংস্কৃতিকর্মীরা আমরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা আবারও দাঁড়াবো এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্বরে, সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেও কখনও ভাবিনি। আজকে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। কারণ যে বাংলাদেশ টেলিভিশন বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছে- সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এখানে আমরা বেড়ে উঠেছি, শিল্পী হিসেবে এই প্রাঙ্গণে বড় হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের সকলের আমরা বিচার চাই। বাংলাদেশে এরকম নৃশংসতা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এত প্রাণহানি আমরা আর চাই না।’
শুভ্র দেব বলেন, ‘এই বিটিভি ছিল বাংলাদেশের প্রখ্যাত সব শিল্পীদের পদচারণামুখর একটি পবিত্র জায়গা। আমি বিশ্বাস করি, কোনও বাংলাদেশি এই বিটিভিতে আক্রমণ করতে পারে না। প্রত্যেকটা শিল্পীর হৃদয়ে যে ক্ষরণ হয়েছে, যে ক্ষত হয়েছে তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। যারা এ ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তাদের সকলকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যে সকল প্রাণহানি হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সেসবের বিচার হবে এটাই আমার কাম্য।’
সুজাতা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে এর বিচার হোক। আমরা শিল্পীরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই এবং যেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। যখন দেশটা উন্নতির দিকে তখনই শত্রুরা আঘাত হানে, ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দেয় দেশকে। আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকবো। দেশজুড়ে জ্বালাও, পোড়াও এ সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।’
এছাড়াও সহিংসতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন আজিজুল হাকিম, মুশফিকুর রহমান গুলজার, রোকেয়া প্রাচী, হৃদি হক, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণসহ উপস্থিত অনেক তারকাই।
ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিটিভিতে শিল্পীরা