১৫তম ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব মেলবোর্নসহ তিনটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দাঁড়কাক’। ইংরেজিতে নাম ‘র্যাভেন’। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
তরুণ বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকীর স্বল্পদৈর্ঘ্য এটি। তিনি জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চদশ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব মেলবোর্ন, ভারতের দশম শিমলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং যুক্তরাষ্ট্রের ত্রয়োদশ ডিসি সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে।
ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব মেলবোর্নে নির্বাচিত মাত্র ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের একটি হিসেবে ‘দাঁড়কাক’ আগামী ১৫ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত উৎসবের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম IFFM365-এ শুধু অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অন্যদিকে আগামী ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট ভারতের শিমলায় ঐতিহাসিক গেইটি থিয়েটার কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিতব্য শিমলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য চলচ্চিত্রটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এছাড়াও, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য জুরি এবং অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য চলচ্চিত্রটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ডিসি সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে, যা আগামী ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে। ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনীর পর উৎসবের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম Eventine-এ ১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলচ্চিত্রটি উন্মুক্ত থাকবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকদের জন্য।
প্রখ্যাত লেখক শহিদুল জহিরের ছোটগল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন পরিচালক জায়েদ সিদ্দিকী। ‘দাঁড়কাক’ পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল একজন বয়স্ক মানুষ তোরাব শেখ-এর অস্তিত্ব সংকটের গল্প বলে। অর্থ উপার্জন করে না দেখে সে এই সংসারে অপ্রয়োজনীয় বোধ করে। তার অজান্তে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় সে এবার ক্ষুব্ধ হয়, অপমানিত বোধ করে। তোরাব শেখ সিদ্ধান্ত নেয় স্বেচ্ছায় হারিয়ে যাওয়ার। সে চলে গেলে তারপরই বাকিরা বুঝতে পারে সংসারে তার অস্তিত্ব কতটা কাঙ্ক্ষিত।
এই তোরাব শেখ চরিত্রে অভিনয় করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি আরও অভিনয় করেছেন আমিনুর রহমান মুকুল, ইকবাল হোসেন, টুনটুনি সোবহান, ফজলুল হক, তাহুয়া লাবিব তুরা এবং এবিএম সাঈদুল হক। অভিষেক হয়েছে জেরিন আক্তার শিমুল এবং আখলাকুজ্জামান খানের।
পরিচালক নিজেই প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন ছবিটির। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন সাইয়্যিদ শাহজাদা আল কারীম, ইসরাত জাহান, সাকিব ইফতেখার ও হাসিব শাকিল। চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন হাসনাত সোহান। চলচ্চিত্রটির সম্পাদনা ও শব্দ পরিকল্পনা করেছেন সুজন মাহমুদ। লাইন প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন মশিউর রহমান, শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন পরিচালকের সঙ্গে তাসনিম নিশো। নিশো একই সাথে প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া সহকারী পরিচালক ছিলেন আখলাকুজ্জামান খান ও মল্লিকা রায়। সহকারী শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন দুর্জয় রায় এবং পোশাক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন তানজিনা ইসলাম।
অত্যন্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে জানিয়ে পরিচালক বলেছেন, ‘এটি খুবই ব্যক্তিগত চলচ্চিত্র, যা সমাজের বয়োবৃদ্ধ মানুষের প্রতি আমাদের অবহেলা এবং ফলশ্রুতিতে তাদের যে অসহায়ত্বের অনুভূতি তা তুলে ধরে। আমরা সবাই একদিন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বো, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা গুরুত্বহীন। সেটাই ছবিটির প্রতিপাদ্য।’
চলচ্চিত্রটি এখন পর্যন্ত সাতটি দেশের ৯টি উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪, বার্লিনের ১২তম ইন্দো-জার্মান ফিল্ম উইক ২০২৪, কলকাতার ৭ম দক্ষিণ এশীয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪ এবং ভারতের রাউন্ড দ্য ফ্রেম ফিল্ম কম্পিটিশন ২০২৪।