বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
Title :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাংবাদিক মনির হায়দার পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চূড়ান্ত পঞ্চগড়ে ডিসির আশ্বাসে অনশন থেকে সরে আসলেন স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুইজন নিহতের ঘটনায় আটক-৪ সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন রিমান্ড শেষে জেল হাজতে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী আবারও তিন দিনের রিমান্ডে-আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ মেহেরপুরে প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা রয়ে গেছে বঞ্চিত দেবীগঞ্জে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একাউন্ট থেকে মসজিদের টাকা উধাও দেবীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনার মামলায় চেয়ারম্যান আটক দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করতে ঐক্যের বিকল্প নেই…তারেক রহমান

মেহেরপুরে কৃষকের বিভিন্ন ফসল প্রদর্শনীতে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • Update Time : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৮ Time View
মেহেরপুরে কৃষকের বিভিন্ন ফসল প্রদর্শনীতে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
মেহেরপুরে কৃষকের বিভিন্ন ফসল প্রদর্শনীতে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

এ যেন দূর্নীতি-অর্থ লোপাট আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষি খাতে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দিয়ে হরিলুট করা হয়েছে অর্থ।

ভুক্তভূগীগদের ন্যায্য উপকরণ থেকে বঞ্চিত, প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে দলীয়করনের মাধ্যমে প্রদর্শনী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

এসব অনিয়মের হাত থেকে রেহায় পায়নি জনপ্রতিনিধিরাও। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। প্রকল্পে ফসলের প্রদর্শনীতে কি ধরণের সুযোগ-সুবিধা আছে তা জানতে বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা কৃষি অফিসে গেলে কৃষকদের কোন সহযোগিতা না করে বরং তাদের সাথে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয় এবং হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন কৃষকেরা।

তবে এসব অভিযোগ আর অনিয়মের বিষয়ে ২০২৩-২৪ এবং ২৪-২৫ অর্থবছরের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকদের তালিকা এবং কৃষকদের বরাদ্দের তথ্য গত ২৫ দিনেও দেয়নি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। প্রকল্পের ওয়েবসাইটেও মেহেরপুরের প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকদের তালিকা এবং কত টাকা বরাদ্দ এসেছে তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, একেক প্রকল্পের একেক ধরন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ প্রদর্শনী আসে তার সময়। কোনটি প্রদর্শনীতে ৫ শতক, ১০ শতক আবার কোনটিতে ২০ শতক আছে, কোনটা এক বিঘাও আছে। প্রকল্পে পার্থক্য থাকে। সাধারণত মে থেকে জুনের মধ্যে বরাদ্ধ বেশি আসে।

মূলত অর্থবছরের শেষের দিকে বরাদ্ধ বেশি আসে। বিভিন্ন মৌসুম যেমন রবি আছে, খরিপ-১ ও ২ আছে। আমি মেহেরপুর থেকে চলে আসার পর পরবর্তীতে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না। কুলের চারা আমার সময় দেওয়া হয়নি। কারণ এই প্রদর্শনীগুলো পরে আসছে। বরি মৌসুমে কুলের চারা নেই। ফল বাগান আছে খরিপ-১ ও ২ তে।

প্রতি জেলায় একই বরাদ্দ হওয়ায় যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকদের জন্য দেওয়া বরাদ্ধের তালিকা ঘেটে দেখা যায় সেখানে ২০ শতাংশ জমির জন্য কুল চাষে সার, কীটনাশকসহ আনুসাঙ্গীক খরচ ১৫ হাজার ৮শ টাকা, ট্রাইকো কম্পোষ্ট প্রদর্শনীতে রিং ও স্লাব, সেড নির্মাণসহ, আনুসাঙ্গীক খরচ ২০ হাজার টাকা, ড্রাগন প্রদর্শনীতে ১০ শতক জমির জন্য বীজ, সারসহ আনুসাঙ্গীক খরচ ৩০ হাজার ৮শ টাকা, টমেটো প্রদর্শনীতে সারসহ আনুসাঙ্গীক খরচ দিয়ে ২১ হাজার ৭শ টাকা বরাদ্দ দেখা যায়।

উপরোক্ত একই প্রদর্শনীতে যশোরের থেকে মেহেরপুরের চিত্র ভিন্ন। মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আশাদুল হক ৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৩ বছরের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে কুল চাষ করেছেন। তিনি পেয়েছেন ২টি প্রদর্শনী। হিসেব অনুযায়ী ১৫ হাজার ৮শ টাকা করে ২টি প্রদর্শনীতে তার বরাদ্দ আসে ৩১ হাজার ৬শ টাকা। সব কিছু মিলিয়ে ২ হাজার টাকা করে ২টি প্রদর্শনীতে এখন পর্যন্ত তিনি ৪ হাজার টাকার মতো উপকরণ পেয়েছেন।

আশাদুল হক বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারবো না যে আমার প্রদর্শনীতে কত টাকা আমার জন্য বরাদ্ধ এসেছে। আমরা ইউপি সদস্য হিসেবে যদি বলতে না পারি তাহলে সাধারন চাষিদের কি অবস্থা হবে। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করে কোন কিছু পাইও নি আমরা। কেউ কিছু বলতে পারে না।

সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমসহ মো: শাহাজাহান, রোজিনা খাতুন ৩ জনই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রযুক্তির আওতায় ২৩-২৪ অর্থবছরের জুন মাসের ১৪,১৫ ও ১৬ তারিখে ট্রাইকো কম্পোষ্টের প্রদর্শনী পেয়েছেন। এই প্রদর্শনী থেকে বায়োডার্মা সার, সেড নির্মাণ, সাইনবোর্ড ও রেজিষ্টার এবং শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাবদ তিন জনের ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদের ভাগ্যে মিলেছে যতসামান্য মোট ৫-৬ হাজার টাকা ও নিন্মমানের উপকরণ। আর পাবেন কি না তাও জানেন না তারা। তাদের জানানো হয়নি কত টাকা বরাদ্দ আছে প্রদর্শনীতে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল ট্রাইকো কম্পোষ্ট তৈরি করার জন্য। আমরা সব উপকরণ পাইনি। আমরা টিন, রিং আর খুটি পেয়েছি। এগুলো এতো নিন্মমানের যা কাজের অযোগ্য। আমরা যা উপকরণ পেয়েছি তা হয়তো ২ হাজার টাকার মতো হতে পারে। যে উদ্দ্যেশ্য নিয়ে আমাদের প্রদর্শনী দিয়েছিল তা পূরণ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে সদর কৃষি অফিসের প্রতি আমাদের যে আস্থা সেটি আর থাকবে না।

সদর উপজেলার হিজুলি গ্রামের টমেটো চাষি ফারুক হোসেনের ছেলে আল আমিনের নামে প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ আসে। সব উপকরণ দিয়ে তিনি এখন পর্যন্ত আনুমানিক ২ হাজার টাকার মতো উপকরণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আর কিছু পাবেন কি না তা জানেন না তিনি।

ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের যে কত বরাদ্দ আসে আমরা তা জানি না। আমাদের কোন সিট দেখায় না। আমি সব মিলিয়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার মত উপকরণ পেয়েছি। আমি বার বার জিজ্ঞেস করেও কিছু পাইনি।

অনুসান্ধানে উঠে এসেছে, শুধুমাত্র এই ৬টি প্রদর্শনীই নয় বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীতে সদর উপজেলার ১৬টি ব্লকের প্রদর্শনী প্রাপ্ত চাষিদের অধিকাংশের একই অবস্থা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওয়তায় প্রকল্প আসে সারা বাংলাদেশে। যার মধ্যে মেহেরপুরও ছিল। সেই প্রকল্পে প্রাদর্শনীর রক্ষাণাবেক্ষণ ও পূণ:স্থাপনের জন্য ২৩-২৪ অর্থবছরে পুনঃরায় ১৮৫ জনের নামে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কৃষি প্রযুক্তি গ্রাম প্রকল্পে সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের রেজিষ্টার খাতায় দেখা যায় রফিকুল ইসলাম, সাইমা খাতুন, আরিফুল ইসলাম সেই খাতায় সই করে সমস্ত উপকরণ পেয়েছেন।

কিন্তু মাঠ পর্যায়ের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। মেহেরপুর সদর উপজেলার ময়ামারি গ্রামের কাঞ্চন খাতুন। রেজিষ্টার খাতার তথ্য বলছে, তার নাম সাইমা খাতুন। তার অভিযোগ তার নাম ও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে ঠিক। এসব উপকরণ সমন্ধে কিছুই জানেন না তিনি। সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের রফিকুল ইসলামের অভিযোগও একই রকম। রেজিষ্টার খাতায় কোন সাক্ষর করেন নি তিনি। একই অভিযোগ উত্তর শালিকা গ্রামের আরিফুল ইসলামের। তিনি বলেন, এই রকম কোন খাতায় তিনি সই করেন নি। এই সাক্ষরও তার না। আমার স্বাক্ষর অন্যরকম। কেউ এই সাক্ষর করে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে রেজিষ্টর খাতার আরো বেশ কয়েকটি পাতার ছবি হতে আসে। সেখানেও দেখা যায় আরেক চিত্র। প্রদর্শনীপ্রাপ্ত ভুক্তভূগী চাষিরা কি কি উপকরণ পাবে তা না লিখেই ফাঁকা সই নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মাঠ দিবসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৭ হাজার ৭শ টাকা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে চাষিদের নিয়ে একই অনুষ্ঠানে একাধিক অনুষ্ঠানের ব্যানার পরিবর্তন করে অর্থ লোপাট করারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি চাষির জন্য নাস্তা বাবদ ৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নাম মাত্র ২০-২৫ টাকার নাস্তা দিয়ে অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

বিভিন্ন গ্রামের আরো অনেক চাষি বলেন, প্রদর্শনীতে কি ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে আমরা তা বলতে পারবো না। আমাদের কোন রিসিট দেওয়া হয় না। এখন আমাকে সীমিত করে দিয়ে যদি খাতায় সব কিছু দেওয়া হয়েছে বলে লিখে দেয় তাহলে তো দূর্নীতি হয়েছে। আমাদের অনুষ্ঠানগুলোতে ২০-২৫ টাকার মতো নাস্তা দেওয়া হয়।

আমরা পরে জানতে পারি আমাদের বরাদ্দ আরো অনেক বেশি। আমরাসহ অনেক চাষি বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তার কাছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানতে গেলে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আবার একটা অনুষ্ঠানে একাধিক ব্যানার পরিবর্তন করে টাকা পয়সা লুটপাট করে কৃষি কর্মকর্তারা।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে ফিল্ড কর্মকর্তারা বলছেন, প্রদর্শনীর বরাদ্দ কিংবা উপকরণ সমন্ধে কিছুই জানেন না তারা। চাষিদের তালিকা করে কৃষি কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়। প্রদর্শনীগুলোতে কি কি উপকরণ কিংবা কি ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে তাও জানি না। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন কৃষি কর্মকর্তা।

একাধিকবার যোগাযোগ করার পর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ইতিপূর্বে এই উপজেলাতে যত প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোও আমরা দেখভাল করার চেষ্টা করছি। কোন জায়গায় কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হলে সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। যদি কোন জায়গায় কোন অনিয়ম থাকে তাহলে সেগুলো দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে তিনি বিভিন্ন প্রদর্শনীর প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্ধ এসেছে তা এড়িয়ে যান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, তথ্য-উপাত্ত সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবে। আর কারো বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin