পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের বন বিভাগের বদেশ্বরী এলাকার বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামানকে বাঁচানোর জন্য ঢিলেঢালা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের তীর দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা বলেন নিশিকান্ত মালাকারের বাড়ি এবং অভিযুক্ত কামরুজ্জামানের বাড়িও নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাকে অনেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নিশিকান্ত মালাকার বলেন, আমাকে তদন্তভার দেয়ার জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলে আমি তদন্তের দায়িত্ব নেইনি।
কামরুজ্জামান টুটুল দেবীগঞ্জ উপজেলার বদেশ্বরী বিট কর্মকর্তা হিসেবে কয়েক বছর ধরে দায়িত্বে ছিলেন। একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারনে গাছ কেনা বেচার লোকজনের সাথে তার সু সম্পর্ক গড়ে উঠে।
বিট এলাকার স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, তিনি বদেশ্বরী বিটে বিট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন স মিলের মালিক ও গাছ ব্যবসায়ীদের ম্যানেজ করে সেই বিটের বন বিভাগের বন বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ তার নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে কেটে বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, তাকে শুধু রাজশাহীতে বদলী করাই শেষ হবেনা। এ সমস্ত দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে চাকরিচুত্য করা দরকার। তার মত লোক থাকলে দেশের বন বিভাগ ধব্বংশ হতে বেশি সময় লাগবে না।
পঞ্চগড়ের সহকারি বন সংরক্ষক উজ্জ্বল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাকে দিনের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।
দিনাজপুরের সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের স্বাক্ষরিত কাগজে জানা যায়, বদেশ্বরী বিটের বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান টুটুল বেশ কিছু কাঠ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে উক্ত কাঠসমুহ স্থানীয় একটি স মিলে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধারকৃত কাঠ সমুহের গৃহীত ব্যবস্থা নিতে দেবীগঞ্জ উপজেলার রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারকে নির্দেশ দেন।
রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামানকে ২৬ নভেম্বর বদেশ্বরী বিটের সরকারি কাজ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। যা অনতিবিলম্বে বদলীকৃত স্থানে যোগদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। তাকে রাজশাহী ডিভিশনে ষ্টান্ড রিলিজ করা হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বলেন, কামরুজ্জামানকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলী করা হয়েছে। আমরা তাকে অলরেডি রিলিজও দিয়েছি। এই বিষয় গুলো পরে আরো তদন্ত হবে। আমার কাছে পরে তো তদন্ত রিপোর্ট চাবেন।
বদেশ্বরী বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা পঞ্চগড়ের সহকারি বন সংরক্ষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আজ অথবা কালের মধ্যে বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে যে জব্দকৃত গাছের গুঁড়ি বিক্রির অভিযোগ এসেছে তার তদন্তের প্রতিবেদন বিভাগীয় অফিসে পাঠিয়ে দিব। পঞ্চগড় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহান সাথীর মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারনে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন পূর্বে বদেশ্বরী বিট এলাকার বাগানের বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়। সে সব গাছ বন বিভাগে জব্দ না করে স্থানীয় স মিলে রাখা হয়। সে গাছ স মিলে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে বদেশ্বরী বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদ প্রকাশের পরে বন বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড়ের সহকারি বন সংরক্ষক উজ্জ্বল হোসেনকে তদন্তের নির্দেশ দেন।