পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগের ঘুষের টাকার ঘটনা নিয়ে মারপিটের ঘটনা ঘটার পরে মিমাংসার জন্য বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বৈঠক বসা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আর মিমাংসা হয়নি। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ের চত্বরে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার মিমাংসার জন্য বিকেলেই ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হন।
তবে বিদ্যালয়ের সভাপতি সোনাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও দেবীগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রভাষক মন্জুরুল ইসলাম বাবু উপস্থিত না হওয়ার কারনে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনা আর মিমাংসা হয়নি।
কিন্তু বসার পরে প্রধান শিক্ষক নজরুল আলম তার ঘুষের টাকা নেয়া ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ফেরত না দেয়ার কারনে তাকে বিকেল ৩ টা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় নিয়োগের আবেদনকারীরা ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিকেল থেকেই জড়ো হতে থাকেন বিদ্যালয়ের ছাত্র, অভিভাবক, এলাকার লোকজন ও নিয়োগে আবেদনকারীরা।
বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক, ঝাড়ুদার ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৮ মে তারিখ ছিল নিয়োগের আবেদনের শেষ তারিখ।
অফিস সহায়ক পদে সবুজ শর্মা, ঝাড়ুদার পদে আর আয়া পদে অপর দুই জনকে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ওই তিন পদে তিন জনকে নির্বাচিত করার জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন প্রার্থীদের নিকট হতে নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে টাকা নেন।
পরে নিয়োগ পরীক্ষা না হওয়ার কারনে বিদ্যালয়ের সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবুর কাছে থাকা অফিস সহকারি পদে সবুজ শর্মার ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও অন্যান্য প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নেয়া ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা না দেয়ার কারনে আর মিমাংসা হয়নি।
জানা যায়, নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন প্রার্থীর কাছ থেকে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। সেখান হতে উপরোক্ত টাকা বাদে বাকি টাকা ফেরত দেয়া হয়।
নিয়োগ কমিটির ক্যাশিয়ার হিসেবে নির্বাচিত করে দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সোনাহার বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, কমিটির সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবুর কাছে থাকা ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল আলম তাদের কাছে থাকা ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা না দেয়ার কারনে মিমাংসা হয়নি। আগামী শনিবার বসে মিমাংসা করার কথা রয়েছে।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন করার জন্য আমাকে যে টাকা খরচ করার জন্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে থেকে কিছু টাকা খরচ করেছি। অবশিষ্ট টাকা ফেরতও দিয়েছি।
আব্দুল মজিদ আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে ঘুষের টাকা ভাগবাটোয়ারা নেয়ার কারনেই এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, টাকার হিসেব চাওয়ার কারনে সোনাহার বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আমার উপর হামলা করেছিলেন।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি পদে নিয়োগ প্রত্যাশী সবুজ শর্মা বলেন, অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবুকে দিয়েছি। সে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এখনো দেয়নি। যার কারনে আমি সেনা ক্যাম্পে অভিযোগও দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম বাবু মিমাংসার দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকার কারনে তার বক্তব্য জানা যায়নি।