বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে অবস্থিত। গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরেই দেশের এই বৃহত্তম আলু বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে শ্রমিক সংকটের কারনে আলুর বীজ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। আলু বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীগঞ্জ ডোমার সড়কের নতুন বন্দর এলাকায় অবস্থিত।
এখানে আলুর পাশাপাশি কাসাভা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী ফুল, তিল, সরিষা ও সয়াবিন আবাদ করা হচ্ছে। এবার এ ফার্মে ১শ ২০ একর জমিতে আলু বীজ উৎপাদনের জন্য আলু লাগানো হয়েছে। সেখান থেকে ৮শ থেকে ৮শ ৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে উৎপাদন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। এখানে বারি আলু ২৫,২৮,২৯,৩৫,৩৬,৩৭,৪০,৪১,৪৪,৪৬, ৪৭, ৪৮,৫৪,৬২সহ বিভিন্ন জাতের আলুর বীজ লাগানো হয়েছে এবার।
বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন দেবীগঞ্জের সভাপতি ও দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের নিয়মিত শ্রমিক মোফাজ্জল হোসেন জানান, দেবীগঞ্জের এই কৃষি ফার্মে আমরা নিয়মিত ১৩৭ জন ও অনিয়মিত ১২৯ জন শ্রমিক রয়েছি। সব মিলে যদি আরও ২ শতাধিক শ্রমিক নেয়া হতো তাহলে কৃষি ফার্মের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব হতো।
আলু বীজ উৎপাদনের জন্য কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এখানে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলে ৪ শতাধিক শ্রমিক হলে কৃষি ফার্মের আলু বীজ উৎপাদনে কোন সমস্যা হতো না। শ্রমিক সংকটের কারনে আমরা কোন কাজ সময় মত করতে পারছিনা। আলু বীজ ক্ষেতে নেট দেয়া, ড্রেন করা, পানি দেয়াসহ প্রত্যেকটি কাজ সময়মত করা যাচ্ছেনা। শ্রমিক নিয়োগ করা হলে এ দুর্ভোগ হতো না।
বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন দেবীগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও নিয়মিত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষি ফার্মের মধ্যে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ জমিতে আলুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফসলের বীজ উৎপাদন করা হয়৷ এতে প্রায় ৪ শতাধিক শ্রমিক হলে উৎপাদনে কোন সমস্যা হতো না।
কৃত্রিম প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে সরজমিনে দেখা যায় শ্রমিকরা একজোট হয়ে নিরলস ভাবে কাজ করছে। যেন তাদের দম ফেলানোর সময় নাই। তাদের সাথে কথা বললে তারা আরও জানান, এসব কাজ দ্রুত শেষ না করলে আলুর বীজ উৎপাদন ভালো হবেনা। পোকা আক্রমণ করে আলু নষ্ট করে দিবে। তাই আমরা বিরতিহীন ভাবে কাজ করছি।
দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে নিয়মিত ও অনিয়মিত শ্রমিকের পাশাপাশি রয়েছে প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক কর্মকর্তা (পিএসও) ইলেকট্রিশিয়ান ইন্জিনিয়ার, মেকানিকাল ইন্জিনিয়ার ও কর্মচারীর পদের মধ্যে অফিস সহায়ক, ড্রাইভার, মালি, ট্রাক্টর চালক, ইলেকট্রিশিয়ান সংকট।
ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে হলে গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে চাহিদা দিতে হয় তারপর চাহিদা দেয়ার পরে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে সে চাহিদার বিপরীতে অর্থের জন্য আবেদন দেন। সেখান হতে বরাদ্দ দেয়ার পরে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদি। তাই সহজে জনবল পাওয়া যায় না। এসব কারনে অফিসের কাজ কর্ম করতেও হিমশিম খেতে হয় বলে জানান দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ অমল কুমার দাস।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক সংকট সমাধন হলে আর আবহাওয়া ভালো থাকলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর জনবল নিয়োগের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। আশা করছি এ সমস্যা সমাধান হবে৷