জুতার মালা শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে পরানো হয়নি এই মালা সমস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক আছে তাদের সকলের গলায় এই জুতার মালা পরানো হয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যে অপমান করা হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল এবং কল্পনাতীত। এ ধরনের ঘটনা আমাদের জাতীর মানসিকতা ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা স্বাধীনতাকে অপমান করার শামিল।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতীক আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলার মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও জেলা ইউনিটের আয়োজনে মানববন্ধনে এ কথা বলেন বক্তারা। মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অঃ) আব্দুল মালেক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ পাতানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা উমেদীন মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গুরুদাস হালদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যেভাবে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে এটা স্বাধীনতাকে হেনস্তা করা হয়েছে। হামলাকারীরা যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন তাদের বাবারও যদি মুক্তিযোদ্ধা হতো তাহলে তারা তাদের বাবার গলাতেও জুতার মালা পরাতো। একজন মানুষ অপরাধী হতে পারে, তার নামে মামলা থাকতে পারে তার মানে এই নয় যে তাকে জুতার মালা পরাবেন। তার অপরাধের জন্য রায় দেবে আদালত আছে, বিচার আছে। একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কতবড় অসহায় হলে জুতার মালা পরিয়ে তাকে আপনার কাছে জোড় হাত করে মাফ চাইতে হবে। এই লজ্জা জাতির, এই লজ্জা এই বাংলাদেশের সকলের। শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুকে নয়, যারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক আছে তাদের সকলের গলায় এই জুতার মালা পরানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন আচরণের প্রেক্ষিতে আমাদের কেবল প্রতিবাদ, শোক এবং নিন্দা জানানোর ক্ষমতাই অবশিষ্ট রয়েছে। আমরা কি সেই বাংলাদেশে বসবাস করছি, যে বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? আমরা জীবনবাজি রেখে ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন আমাদেরই লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে, অপমান অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা আবারও জীবন দিতে প্রস্তুত। আমাদের দেহে যতটুকু শক্তি-সামর্থ্য আছে আমরা তাই দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
এর আগে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালি ও মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা উপস্থিত ছিলেন।