ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আপন ভাইয়ের দুই কন্যা সন্তানের সম্পদ আত্মসাৎ করতে বার বার ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে মোজাম্মেল হক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই ঘটনা অবশেষে আদালতে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করছে তারই ভাতিজি। মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিসপুর গ্রামের এ কে এম আশরাফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রীর সন্তান তাসলিমা আক্তার ও তানজিবা আক্তার। এছাড়াও তিনি আরও একটি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন আশরাফুল হক। বাড়িতে দুই মেয়ে রেখে বিগত একযুগ আগে মারা যান তিনি। আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর তার ভাই মোজাম্মেল হক ঘর থেকে ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীর তালাকনামা সহ যাবতীয় কাগজপত্র ও টাকা পয়সা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে প্রয়াত আশরাফের পরিবার।
২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল আশরাফুল ইসলামের ভাই মোজাম্মেল হক নিজ প্রয়োজনে মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিজ নামসহ ৪জনের নাম উল্লেখ করে একটি ওয়ারিশনামা উত্তোলন করেন। ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় চুরি হয়ে যাওয়া আশরাফুলের দ্বিতীয় স্ত্রী নুর আঞ্জুমানকে সেই তালাকনামা প্রদর্শন করেছেন মোজাম্মেল হক। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মোজাম্মেল হক আবারও ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আশরাফুল ইসলামের আরেকটি ওয়ারিশনামা সনদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তোলন করেন। সেখানে আশরাফুলের তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ওয়ারিশ হিসেবে দেখানো হয়।
বিষয়টি মজলিসপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ওয়ারিশ বানিয়ে প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে ২০২০ সালের মার্চে ওয়ারিশ সনদটি বাতিল ঘোষণা করেন এবং থানায় অবগত করে জিডি করেন।
এই অবস্থায় প্রয়াত আশরাফুল ইসলামের এতিম দুই কন্যার সম্পদ আত্মসাৎ করতে আবারও পরিকল্পনা করেন তারই ভাই মোজাম্মেল হক। তিনি মজলিসপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে ও ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মনির মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে এবং নকল সীল-প্যাড বানিয়ে আবারও ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন। যার তারিখ উল্লেখ করা হয় ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর। বিষয়টি জানতে পেরে বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও মেম্বার গত ২৪ ডিসেম্বর তা পূনরায় বাতিল ঘোষণা করেন।
ওয়ারিশ সনদ নিয়ে চাচার এমন বার বার প্রতারণার ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর আশরাফুল ইসলামের মেয়ে তাসলিমা আক্তার বাদি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামী করে তার চাচা মোজাম্মেল হক ও আশরাফুল ইসলামের তালাক দেওয়া স্ত্রী নূর আঞ্জুমান সহ চারজনকে।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া এই বিষয়ে বলেন, বার বার জালিয়াতি করেছেন বাদির চাচা মোজাম্মেল হক। আমরা সকল নথি আদালতে উত্থাপিত করেছি। আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।