পঞ্চগড়ে সাবেক রেলমন্ত্রী, এমপি, সাবেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৫৪ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো সাত আটশত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদীর আইনজীবি আব্দুল ওহাব আনসারী বলেন, বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানা পুলিশকে তদন্ত করে এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার পঞ্চগড় আমলি আদালতে মামালাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদি বোদা উপজেলার চন্দনপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রশিদ আরেফিন এর স্ত্রী মোছা: শিরিনা আক্তার। তিনি আসামীদের আটক করে সুবিচারের দাবী জানিয়েছেন। মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেল মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, পঞ্চগড় ১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পঞ্চগড়ের সাবেক পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস ও এস এম সফিকুল ইসলাম, পঞ্চগড়ের জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন, পঞ্চগড় সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ মিঞা, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আল তারেক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবু তােয়াবুর রহমান, মোশারফ হোসেন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিনসহ ১৫৪ জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৭শ থেকে ৮শ জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে, পঞ্চগড় জেলা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ পালন করছিল। সমাবেশে জেলা উপজেলার নেতাকর্মীসহ জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা করে, পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানেগ্যাস ছুঁড়ে।নেতাকর্মীরা প্রাণভয়ে দিক বেদিক ছুটাছুটি করে। আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে বাদিনীর স্বামী মৃত আব্দুর রশিদ আরেফিনকে এলোপাথারি মারপিট করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে আঘাত করে। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে যায়।
তাকে উদ্ধার করতে নুরুজ্জামান বাবু গেলে তাকেও মারপিট করে রক্তাক্ত করে। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চলে গেলে, আব্দুর রশিদ আরেফিন ও নুরুজ্জামান বাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে মৃত ঘোষণা করে।নুরুজ্জামান বাবুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেলে স্থান্তান্তর করে। তার মাথায় পাঁচটি সেলাই রয়েছে। আসামীরা দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেয়। এতে ছয় লক্ষ ৫৯ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়।তৎকালীন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় এতদিন মামলা করতে পারেননি বাদী।