পঞ্চগড়ের স্কুল ছাত্রীকে বেড়ানোর কথা বলে বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রেমিকসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদন্ড প্রাপ্তরা একজন প্রেমিকের বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে আর অপর ৫ জন সহযোগিতার কথা বলে ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
বুধবার (২৮ মে) পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাসুদ পারভেজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও এক বছর কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মালগোবা এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে হাসান আলী (২৫), পুরাতন আটোয়ারী এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৫১), একই এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩০), কৈলাশ চন্দ্রের ছেলে অমর চন্দ্র (৩৮), খাজিম উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৩) ও একই উপজেলার ফতেহপুর এলাকার খামির উদ্দিনের ছেলে সবুজ আলী (৩৩)।
পঞ্চগড়ের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। আসামী হাসানের সাথে ওই স্কুল ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ২০২২ সালের ৬ আগস্ট ওই স্কুল ছাত্রী পঞ্চগড় শহরে হাসানের সাথে দেখা করতে আসে। এসময় হাসান বেড়ানোর কথা বলে তার বন্ধু রাজুসহ ওই স্কুল ছাত্রীকে নিয়ে তাদের মোটরসাইকেল করে আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের পুরাতন আটোয়ারী বন্দরপাড়া গ্রামের পশ্চিম পার্শ্বে কাজী এন্ড কাজীর একটি জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। পরে জঙ্গলের পাশে বেড়ার তৈরী কম্পোষ্ট সারের ঘরে রাত আটটার সময় জোরপূর্বক পর্যায় ক্রমে ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এসময় আসামী সাইফুল, সবুজ, আমিনুল, অমর চন্দ্র ও নজরুল ঘটনাস্থলে আসলে হাসান ও রাজু ওই স্কুল ছাত্রীকে রেখে মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় স্কুল ছাত্রীটি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে, তারা সাহায্য করার কথা বলে কম্পোষ্ট সারের ঘর থেকে তাকে বের করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তারাও পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। পরে আসাী অমর চন্দ্র ওই স্কুল ছাত্রীকে জঙ্গল থেকে রাস্তায় নিয়ে এসে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরের দিন আটোয়ারী থানায় ওই ৭ জনকে আসামী করে মামলা করে ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া ও স্বাক্ষীদের স্বাক্ষী গ্রহণের পর বুধবার ৬ আসামীর উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ।
পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সন্দেহাতিত ভাবে আমরা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। বিজ্ঞ আদালত ৬ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদন্ড প্রদান করেছেন। তবে মামলার আরেক আসামী শিশু হওয়ায় পৃথক আদালতে তার বিচারক কার্য চলমান রয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি।
আসামী পক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব বলেন, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।