মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০১:২০ অপরাহ্ন

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের ‘মস্তিষ্ক’ গুঁড়িয়ে দিল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ১৫ Time View
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের ‘মস্তিষ্ক’ গুঁড়িয়ে দিল ইরান
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের ‘মস্তিষ্ক’ গুঁড়িয়ে দিল ইরান

মধ্য ইসরাইলের রেহোভোতে অবস্থিত ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। বহু বছর ধরে এটি ইসরাইলের সামরিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোমবার রাতে ইরানের এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান এ হামলাকে তাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিচালিত ইসরাইলি হামলার জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

ইসরাইলের হিব্রু ভাষার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ গ্রুপের আওতাধীন দৈনিক দ্য মার্কার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ভবনে সরাসরি আঘাত লাগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এই গবেষণাগারগুলোতে জীবনবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অণুজীববিজ্ঞানের ওপর অত্যাধুনিক গবেষণা চলত। যেগুলোর ফলাফল ইসরাইলের নজরদারি প্রযুক্তি, টার্গেটিং সিস্টেম এবং অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সরাসরি প্রয়োগ হয়েছে। এসব প্রযুক্তি গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডে পরিচালিত হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।

ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটকে অনেক সময় ‘ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মস্তিষ্ক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কেননা, এখান থেকেই মূলত পরিচালিত হয়েছে ড্রোন প্রযুক্তি, এয়ারস্ট্রাইক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং যুদ্ধক্ষেত্রের মেডিকেল টেকনোলজির গবেষণা — যা বহুবার বিভিন্ন বেসামরিক জনপদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে একটি পরিচালনা করতেন ইসরাইলি অধ্যাপক এলদাদ জাহোর। তিনি আণবিক কোষ জীববিদ্যার একজন প্রবীণ গবেষক। অপরদিকে অধ্যাপক এরান সেগালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেও সরাসরি আঘাত লেগেছে।

তিনি জানান, মিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি পানিতে ও কাঠামোগত ক্ষতিতে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার গবেষণাগার মূলত যুদ্ধক্ষেত্রের রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নজরদারি অ্যালগরিদম উন্নয়নে কাজ করত। ইসরাইলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা গেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ল্যাবের ভেতর, ধসে পড়া মেঝে, পুড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো। সূত্রগুলো বলছে, এটি ছিল ইরানের একটি নির্ভুল (precision) হামলা।

দ্য মার্কার তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইরানের এই হামলা কোনো ‘এলোমেলো’ হামলা নয়, বরং খুবই সচেতনভাবে বাছাইকৃত একটি আঘাত। কারণ এই ইনস্টিটিউটটি বহু বছর ধরে সামরিক গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে চালিয়ে আসছিল। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই হামলা ইসরাইলের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

‘অপূরণীয় ক্ষতি’ 

গবেষণাগারের অধ্যাপক শ্যারেল ফ্লেইশম্যান বলেন, ‘লাইফ সায়েন্সের গবেষণাগারগুলোতে এমনসব উপাদান থাকে, যেগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে বহু বছর লাগে। এগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না’। অপর গবেষক অধ্যাপক ওরেন শুল্ডিনার বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন গোটা ল্যাবটাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে’। এটি পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে দুবছর সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ হামলার মাধ্যমে ইরান একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। তা হলো- ইসরাইলি দখলদারিত্বের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন যুদ্ধযন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তখন সেগুলো আর নিরীহ থাকে না। এমন ‘দ্বৈত পরিচয়’ আর বিনা প্রতিক্রিয়ায় চলতে দেওয়া হবে না। সূত্র: আল মায়াদিন ও দ্য মার্কার

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin