মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

এই বছরের প্রেক্ষাপট যেকোনও সময়ের চেয়ে খারাপ: প্রধান উপদেষ্টা

ওয়ান নিউজ ডেস্ক:
  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৪ Time View
এই বছরের প্রেক্ষাপট যেকোনও সময়ের চেয়ে খারাপ: প্রধান উপদেষ্টা
এই বছরের প্রেক্ষাপট যেকোনও সময়ের চেয়ে খারাপ: প্রধান উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই বছরের প্রেক্ষাপট অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে খারাপ। আগের সোশ্যাল বিজনেস ডেগুলোতে আমরা অনুভব করতাম, পৃথিবী একটা আশাব্যঞ্জক দিকে এগোচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম, বিশ্বে যুদ্ধের অধ্যায় শেষ হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, মানবজাতি এখন শান্তিতে বাস করবে। কিন্তু হঠাৎ করেই এ বছর নানা ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। দরিদ্র মানুষ এই যুদ্ধে পিষ্ট হচ্ছে।

শুক্রবার (২৭ জুন) সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ গ্রুপ যৌথভাবে ১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের আয়োজন করেছে। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সর্বোত্তম পথ হলো সামাজিক ব্যবসা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের সামাজিক ব্যবসা দিবস উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

সামাজিক ব্যবসার (সোশ্যাল বিজনেস) রূপান্তর সক্ষম শক্তি এবং এর মাধ্যমে ইতিবাচক টেকসই পরিবর্তন আনার শক্তিশালী উপায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব, যা বর্তমানের হতাশা থেকে মুক্তি এনে তাৎপর্যপূর্ণ রূপান্তর ঘটাতে পারবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মূল বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বিশ্ব একটি ভুল পথে চলছে। কেবল নিঃস্বার্থ, ভালো কাজের জন্য স্বপ্নবান হওয়া এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পৃথিবীতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র সঠিক পথ হল সামাজিক ব্যবসা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

তরুণদের বৈশ্বিক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে ছোট থেকে শুরু করতে হবে, বড় স্বপ্ন দেখতে হবে এবং একসঙ্গে কাজ করে এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে, যার বৈশিষ্ট্য হবে তিনটি শূন্য– শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য গড় কার্বন নিঃসরণ।

চাকরি প্রার্থী নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করার মতো শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম দিন থেকেই যেন জানেন তারা চাকরির জন্য এখানে আসেনি। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রদের স্বপ্ন দেখতে দেওয়া হয় না। আমি বলি, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথম দায়িত্বই হলো, স্বপ্ন দেখার সুযোগ দেওয়া।

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগে স্বপ্ন দেখতে হবে। তারপর কীভাবে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজে বের করো। একে অপরকে চ্যালেঞ্জ দাও।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, তরুণদের বলবো, যদি তুমি একজন চাকরি প্রার্থী হও, তবে সেটি আমাদের জন্য লজ্জার। কারণ আমরা তোমাকে নিজেকে আবিষ্কার করার মতো সাহায্য করতে পারিনি। যদি তুমি নিজেকে আবিষ্কার করো, তাহলে কখনোই চাকরি প্রার্থী থাকবে না। তুমি একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।

সামাজিক ব্যবসার বার্তা কী এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বার্তা হলো, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার বার্তা। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি জাতির অংশগ্রহণ, প্রতিটি জাতির উচিত সেইসব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা, যেগুলো তারা এত বছর ধরে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, এই বার্তাটি খুবই সহজ, যা আমরা বারবার পুনরাবৃত্তি করে আসছি। বার্তাটি হলো, আমরা ভুল পথে চলছি। যদি আমরা এই পথেই এগিয়ে যেতে থাকি, তাহলে আমাদের সবার জন্যই এক বিশাল বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আমরা তার থেকে রক্ষা পাবো না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বারবার বিশ্বকে যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো, পুরো পৃথিবী গড়ে উঠেছে মানুষের স্বার্থপরতার একমাত্রিক ভিত্তির ওপর এবং মানুষকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে স্বার্থপর সত্তা হিসেবে। আমরা এর বিরোধিতা করছি। আমরা বলছি, হ্যাঁ, আমাদের ভেতরে স্বার্থপরতা আছে, তবে এটাও ভুলে যাবেন না যে আমাদের ভেতর নিঃস্বার্থ মানসিকতাও আছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক ব্যবসা দিবস এক ধরনের পারিবারিক মিলনমেলা, যেখানে সবাই একত্রিত হন পরিবারের সদস্যদের মতো।

তিনি বলেন, আপনাদের সবার অনেক গল্প আছে বলার মতো। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নয়, বরং নিজেদের অনুপ্রাণিত করার জন্য। আমরা সবসময় আমাদের সামাজিক ব্যবসা দিবসকে একটি উপলক্ষ হিসেবে দেখি, যেখানে আমরা নিজেদের শক্তি পুনরায় আহরণ করি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ অসাধারণ কিছু করেছে। তরুণরা আশ্চর্যজনক সব কাজ করেছে। তারা রাস্তায় নেমে এসেছে এবং বলেছে এবার যথেষ্ট হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশকে চরম অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে গেছে। তারা শুধু বাংলাদেশের জন্যই এটা করেনি; এটি ছিল পুরো বিশ্বের জন্য।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ শুধু নিজের ইতিহাস নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য একটি ইতিহাস হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সম্মানিত সভাপতি থমাস বাখের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়, যেখানে অধ্যাপক ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনের গভীর প্রভাবের প্রশংসা করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গ্যুইন লুইস, জাপানের ইউগ্লিনা জিজি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মিৎসুরু ইজুমো, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, গ্রামীণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান, ইউনূস সেন্টারের জনসংযোগ অফিসার জিনাত ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin