মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদক প্রতিরোধ মূলক সংগঠন করায় বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুরসহ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের নাওঘাট গ্রামের (রমুদ্দীন ব্যাপারী মৃত আব্দুল হাইয়ের বাড়ীতে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মোঃ শাহ আলম (৪৮) বাদী হয়ে গত ১৩ই জুন ৮৭৩/২৫ ক্রমিক নাম্বারে আশুগঞ্জ থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এতে একই গ্রামের প্রতিবেশী (রমুদ্দীন ব্যাপারী বাড়ীর) মৃত রুহুল আমিনের ছেলে শিমুল ব্যাপারী (৪২) কে প্রধান অভিযুক্ত করে আরো ৭জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন, একই এলাকার মৃত আলী আফজালের তিন ছেলে মোঃ সোহেল (৪০), সারদুল মিয়া (৩৮) ও মোশারফ হোসেন (৩২) এছাড়াও নাইম ভূইয়ার চার ছেলে সজিব ভূইয়া (৩৫), রাজিব ভূইয়া (৩৭), সাব্বির আহমেদ ভূইয়া (৩০), ফয়সাল ভূইয়া (৪০) সহ আরো বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ পত্র দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা এলাকার উশৃঙ্খল এবং খারাপ প্রকৃতির লোক। দীর্ঘ দিন যাবৎ তারা এলাকার নিরীহ মানুষের উপর অন্যায় অত্যাচার করে আসছে। এছাড়াও ১নং ও ৩ নং অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। অভিযুক্তদের মাদক ব্যবসার প্রভাবে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে এলাকার স্থানীয়দের সম্মতি নিয়ে মাদক প্রতিরোধে একটি সংঘঠন তৈরি করেন ব্যবসায়ী মোঃ শাহ আলম। সংগঠনটি গঠন করার মূল লক্ষ্য ছিলো এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধ করা।
অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্তরা এই বিষয়টি জানতে পেরে মোঃ শাহ আলমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এবং তাকে মারধর করার জন্য খুঁজতে থাকে। পরে গত ১০ই জুন ২০২৫ইং তারিখ দুপুরে অভিযুক্তরা হাতে লাঠিসোটা, লোহার রড, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অভিযোগকারী শাহ আলমের বসত বাড়ীতে প্রবেশ করে তার নাম ধরিয়া অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। তখন শাহ আলম ঘর থেকে বের হয়ে অভিযুক্তদের গালমন্দ না করার জন্য নিষেধ করেন। পরে তাকে মারধর করার জন্য ধাওয়া করে। তখন সে দৌড়াইয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দক্ষিন পার্শ্বেই তার শশুর বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেই।
তিনি অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে অভিযুক্তরাসহ অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তদের নিয়ে তার বসত ঘরে প্রবেশ করে দরজা, জানালা সহ ঘরের আসবাপত্র কুপাইয়া ভাংচুর করে আনুমানিক এক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। এছাড়াও বসত ঘরে থাকা সুকেচের ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ দুই লক্ষ টাকা এবং ৬ ভরি ওজনের বিভিন্ন ধরণের স্বর্ণা লংকার চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, পরবর্তীতে তার শশুর বাড়ীর লোকজন সহ আশপাশের স্থানীয়দের নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তরা শাহ আলমকে দেখে প্রাণ নাশের হুমকি ধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শিমুল ব্যাপারী ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কতিপয় লোকজনকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে হাসহ পায় না।
এবিষয়ে ব্যবসায়ী মোঃ শাহ আলম বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদক প্রতিরোধ মূলক একটি সংগঠন করায় তারা আমার বসত ঘর ভাংচুর করে এতে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নগদ টাকা সহ স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমি। অভিযুক্তদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আমার পরিবার এখন দুঃচিন্তার মধ্যে রয়েছে। এসব ঘটনার পর থেকে তাদের ভয়ে আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কে জীবন যাপন করছি। পরে ঘটনাটির বিষয় নিয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের অবহিত করেছি।
বিষয়ে নাওঘাট ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ আলাল মিয়া বলেন, র্দীঘদিন যাবৎ একটি চক্র এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের ভয়ে মুখ খোলে কথার সাহস পায়না। অনেক সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পরে। আমরা প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
এবিষয়ে নাওঘাট ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার সানাউল্লা মিয়া বলেন, আমরা চাই এলাকা মাদক মুক্ত একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা। এলাকার সাধারণ মানুষ যারা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের উপর হামলা ও নির্যাতন করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নিকট দাবী জানায় যেনো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়।
এবিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুগঞ্জ থানার এসআই কাজী ছানোয়ার হোসেন বলেন, বাদী শাহ আলমের অভিযোগের ভিত্তিত্বে আমরা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান আছে। এবং এই ঘটনায় একটি সিআর মামলা করা হয়েছে।