মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নাটকীয় বিরোধে জড়িয়ে পড়ার কয়েক সপ্তাহ পর নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক। শনিবার (৫ জুলাই) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ ঘোষণা দেন মাস্ক। বলেন, তিনি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। দলটিকে তিনি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তবে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নেওয়ায় মাস্ক নিজে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য। দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন, তাও উল্লেখ করেননি তিনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর সময়ই মাস্ক প্রথম এই দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার সাবেক মিত্র ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন।
সেই বিরোধের সময় মাস্ক এক্স-এ একটি মতামত জরিপ চালান, যেখানে তিনি অনুসারীদের জিজ্ঞেস করেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন কি না। শনিবার সেই জরিপের প্রসঙ্গ টেনে মাস্ক লেখেন, ‘জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ নতুন দল চেয়েছেন এবং সেটাই আপনারা পেতে চলেছেন!’
এক্সে তিনি আরও লিখেছেন, ‘দেশকে অপচয় ও দুর্নীতিতে দেউলিয়া করে ফেলার ক্ষেত্রে আমরা একদলীয় শাসনে বাস করি, কোনও প্রকৃত গণতন্ত্রে নয়। আজ আমেরিকা পার্টি গঠিত হলো আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।’
শনিবার পর্যন্ত দলটির নিবন্ধনের কোনো কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইলেকটোরাল কমিশন প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত দুই প্রধান দলের বাইরে থেকে রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলার চেষ্টা আগে অনেকেই করেছেন। তবে জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে বাস্তব হুমকি হয়ে ওঠা তাদের জন্য বরাবরই কঠিন হয়েছে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবার্টারিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি এবং পিপলস পার্টির প্রার্থীরা ট্রাম্প বা তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে ঠেকাতে ব্যর্থ হন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন মাস্ক—গত বছর নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পের সঙ্গে নাচতেও দেখা গেছে তাকে। এমনকি তার চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে সাক্ষাৎ করেন।
মাস্ক ছিলেন ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকও। তিনি ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচনের জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের পর মাস্ককে ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ নামে একটি নতুন দফতরের প্রধান করা হয়। দফতরটির কাজ ছিল ফেডারেল বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁটের পরিকল্পনা করা। তবে মে মাসে মাস্ক প্রশাসন ত্যাগ করলে এবং ট্রাম্পের কর ও ব্যয় পরিকল্পনার প্রকাশ্য সমালোচনা করলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এই বিল সম্প্রতি কংগ্রেসে খুব অল্প ব্যবধানে পাস হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে স্বাক্ষর করেছেন। বিলটিতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দ এবং কর ছাড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং আগামী এক দশকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতিতে অতিরিক্ত ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি যুক্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিলের কড়া সমালোচনা করেছেন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।’টেসলার মালিক হিসেবে মাস্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিলটিতে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ বা ইলেকট্রিক গাড়ির মতো পণ্যের জন্য কোনও প্রণোদনা রাখা হয়নি।
ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, ‘ইতিহাসে কোনও মানুষ এত বেশি ভর্তুকি পেয়েছেন বলে জানা যায় না, যতটা মাস্ক পেয়েছেন। ভর্তুকি ছাড়া ইলন সম্ভবত দোকান বন্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতেন।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি দক্ষতা বিভাগকে মাস্কের কোম্পানিগুলোর জন্য দেওয়া ভর্তুকি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হবে। ট্রাম্প মাস্কের অন্যান্য ব্যবসার দিকেও ইঙ্গিত করেন।
এর আগে মাস্ক বলেছিলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এবং ট্রাম্পের করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধি বিলের সমর্থন দেওয়া আইনপ্রণেতাদের পরবর্তী নির্বাচনে হারাতে অর্থ ব্যয় করবেন।
রিপাবলিকানদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।