গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বৈঠক সম্পর্কে অবগত দুপক্ষের কর্মকর্তারাই শনিবার (১২ জুলাই) বলেছেন যে, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মাত্রা নিয়ে একমত হতে পারছে না কেউ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। কাতারের দোহায় শনিবার দিনভর দুপক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারে আলোচনায় বসেছে। তাদের আলাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহার এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটানো। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি শিগগিরই বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে এসব আলোচনার মধ্যেও থেকে নেই হত্যার মহাযজ্ঞ। গতকাল আলোচনার টেবিলে যখন কর্মকর্তারা চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে তুমুল বাকযুদ্ধে লিপ্ত, তখন গাজায় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিগত দেড় মাসে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ত্রাণকেন্দ্রে হত্যার শিকার হয়েছেন প্রায় আটশ মানুষ।
গতকালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে বলেন, লোকজনের মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। নাসের হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়া নিথর দেহ এবং শোকাহত স্বজনদের দেখতে পেয়েছেন রয়টার্স প্রতিনিধি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবারও জানিয়েছে, তারা কেবল সতর্কতামূলক গুলি ছুঁড়েছে। তাদের গুলিতে কেউ হতাহত হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এমন প্রমাণ মেলেনি বলেও দাবি করে তারা।
তবে, এসব নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ নয়, হামাসের গোয়ার্তুমিকেই সংকট অবসানের প্রধান বাধা বলে মন্তব্য করেছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন, হামাসের অনড় অবস্থানের কারণে মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষে সমঝোতা পথে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, হামাসের বরাবরের অভিযোগ, ইসরায়েলি পক্ষের অযৌক্তিক দাবিই চুক্তির পথে প্রধান বাধা। ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল একটি মানচিত্র পেশ করেছে, যেখানে তারা গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ চায়। হামাস এই মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করেছে।
দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্চে পুনরায় হামলা শুরুর আগের সীমানা পর্যন্ত তাদের অপসারণ দাবি করেছে হামাস। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আরও বলেন, ত্রাণ প্রবাহ এবং যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টিও চুক্তিতে জটিলতা তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্র আরও সক্রিয় ভূমিকা নিলে অচলাবস্থা নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
হামাস দীর্ঘদিন ধরেই বলছে, যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ না হলে তারা সব জিম্মি মুক্ত করবে না। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, সব জিম্মি মুক্তি ও হামাসকে সামরিক এবং প্রশাসনিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার আগ পর্যন্ত তারা থামবে না।