মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তি বৈঠক ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর অতিরিক্ত সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপ করা হতে পারে।
ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, রাশিয়ার তেল কেনার কারণে আমরা ভারতের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করেছি। আলোচনার ফল ভালো না হলে এই শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়তে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ জরিমানা আর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। বুধবার ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, মস্কো শান্তিচুক্তি মানতে অস্বীকৃতি জানালে গুরুতর পরিণতি হবে।
বেসেন্ট বলেন, ইউরোপীয়রা পাশে দাঁড়িয়ে সমালোচনা করছে কীভাবে আলোচনা হবে, কী করা উচিত। ইউরোপীয়দের উচিত আমাদের সঙ্গে এই শুল্কে যোগ দেওয়া, সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞায় অংশ নেওয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সস্তায় রুশ অপরিশোধিত তেলের আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। ২০২৪ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। যা ২০২১ সালে ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। এই কারণে দিল্লি-ওয়াশিংটনের বাণিজ্য সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়েছে এবং চলমান আলোচনাও ব্যাহত হয়েছে।
দিল্লি জানিয়েছে, বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে দামের দিক থেকে সবচেয়ে সস্তা তেল কিনতে তারা বাধ্য। যাতে দেশের লাখো দরিদ্র মানুষকে মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে রক্ষা করা যায়।
মঙ্গলবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় ‘কিছুটা জেদি’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী করা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার অংশ। ট্রাম্প একাধিকবার ভারতকে ‘শুল্ক অপব্যবহারকারী’ আখ্যা দিয়েছেন এবং ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান।
দিল্লি-ওয়াশিংটনের বাণিজ্য আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলছে। ২৫ আগস্ট মার্কিন আলোচক দলের ভারতে আগমনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যে শুল্ক কমাতে ভারতের অনীহাই আলোচনার বড় অন্তরায় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
ট্রাম্পের নতুন ৫০ শতাংশ শুল্কহার ২৭ আগস্ট কার্যকর হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি কার্যত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সমান। এতে ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি করযুক্ত বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠবে। যা টেক্সটাইল, গহনা খাতসহ রফতানিনির্ভর শিল্পে বড় আঘাত হানতে পারে এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি অন্তত অর্ধেক কমিয়ে দিতে পারে।