শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন
Title :
‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে গলা টিপে হত্যা করেছে স্বৈরাচার সরকার-পঞ্চগড়ে প্রফেসর মিঞা নূরুল হক খুলনায় কৃষি ব্যাংকের লকার ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুট জন্মাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারেক রহমান লুটেরাদের সহযোগিতা করেছেন তিন গভর্নর: অধ্যাপক মইনুল ইসলাম যথাযথ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না: ডা. তাহের বিএনপির জয় সুনিশ্চিত: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের পতন হলেও আজকে অনেকের মধ্যেই ফ্যসিবাদী আচরনের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি-নুর মুজিবনগর সীমান্তে ভারতে পাচারকালে ইউএস ডলারসহ পাচারকারী আটক বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে গাংনীতে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ওয়ান নিউজ ডেস্ক:
  • Update Time : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ০ Time View
‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি
‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছিল একটি নিয়মিত চিত্র। ধারাবাহিক সেসব নির্যাতনের একটি চিত্র ফুটে ওঠে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা হলগুলোর বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মুখে।

তেমন এক নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সূর্যসেন হলে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান। তার ভাষায়, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অনিয়মিত হওয়ায় ২০২৪ সালের শুরুতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

বলেন, ‘ওই বড় ভাই প্রথমে আমাকে আলাদা রুমে নেয়। …তারপর সেখানে আমার বাম হাতটা ধরে একটু মোচড় দিয়ে রাখল। এরপর ক্রমাগত আমার কান আর গাল বরাবর থাপ্পর দিতে থাকে সর্বশক্তি দিয়ে। এতো জোরে চড় মারছিল যে আমার কান থেকে রক্ত বের হয়ে আসে’।

আরিফুর বলেন, ‘প্রতিদিন গেস্টরুম করা লাগবে। হলে থাকার জন্য এটাই নিয়ম। আপনার যদি ফাইনাল পরীক্ষাও থাকে তারপরও আপনাকে এসে অপেক্ষা করতে হবে। ভাইয়েরা আসলে তাদেরকে বলে অনুমতি নিয়ে তারপর পড়তে যাবেন। নাহলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যাবে’।

তবে গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখন আর গেস্টরুম নেই বলে জানাচ্ছেন আরিফুর রহমান। সেই সঙ্গে আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র-রাজনীতি ফিরলে আবারও ‘গণরুম-গেস্টরুম কালচার’ ফিরে আসবে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।

ঢাবির দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেখেন এখন আমরা স্বাধীন। দিনে পাঁচ/ছয় ঘণ্টা রাজনীতিতে নষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু হলে রাজনীতি ফিরলে এর প্রভাব পড়বেই। হলে রাজনীতি না থাকলে ছাত্রদল, শিবির কিংবা বাম সংগঠন তাদের কী সমস্যা আমি বুঝি না আসলে। তারা কমিটি দিলেই গেস্টরুম, গণরুম এগুলো ফিরবে’।

পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আরিফুর রহমান যেমন হলে ছাত্ররাজনীতি চান না, তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও অনেকে রাজনীতির বিপক্ষে। ফলে এক সপ্তাহ আগে যখন ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কমিটি ঘোষণা করে তখন ছাত্রদের একটা অংশ এর বিপক্ষে বিক্ষোভ দেখায়। হলে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষোভের মুখে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মৌখিক ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিন্তু এর মাঝেই ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠন হলে ছাত্র-রাজনীতি শুরু করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ কোনো কোনো সংগঠন আবার হলে রাজনীতি চায় না।

ফলে ডাকসু নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি কেমন অবস্থায় থাকবে, তা নিয়ে নানা বিতর্ক, আলোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

প্রকাশ্য রাজনীতি বনাম গোপন রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে এসেছে আলোচনায়।

যদিও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় লেজুড়বৃত্তিক বা দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয় এবং ৯ দফার মধ্যে সেই দাবি অন্তর্ভূক্ত করা হলেও এখন রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে ছাত্র সংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে মূলত: গত বছরের ১৫ জুলাই ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার পর।

পরবর্তীকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা দাবির মধ্যেও বলা হয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা।

কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব দ্রুতই রাজনীতি ফিরে আসে। সক্রিয় হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সবগুলো ছাত্রসংগঠন। এমনকি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে।

এসব সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠকে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আর সামনে আসেনি।

এরইমধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে খোদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একটা অংশ নিজেরাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নামে একটি ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেন। যেটা এনসিপির হয় কাজ করছে এমন অভিযোগ আছে।

যদিও দলটির নেতারা কারও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার কথা অস্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ- বাগছাসের মুখপাত্র হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘এটা আসলে অপপ্রচার। আমরা এনসিপির লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন না। আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি। এনসিপির সঙ্গে আমাদের সাংগঠনিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের কোনো অভিভাবক সংগঠন নেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের অভিভাবক’।

অভ্যুত্থানের নেতাদের এই দল বাগছাস ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে হলগুলোতে তারা রাজনীতি চান না।

যদিও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন হলে রাজনীতির পক্ষে।

কারণ হিসেবে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, হলগুলোতে রাজনীতি করতে না দিলে ডাকসু নির্বাচনে তারা কীভাবে কাজ করবেন?

তার মতে, ‘হলগুলোতে যদি আমাদের সাংগঠনিক কোনো রূপ না থাকে তাহলে আমরা প্রচারণা কীভাবে করবো। আমরা তো কোনো গুপ্ত সংগঠন না যে গোপনে কাজ করবো। আমাদের প্রকাশ্য সাংগঠনিক কাঠামো দরকার। সেটার জন্যই আমরা হল কমিটি দিয়েছি’।

তবে হলে সবার আগে কমিটি দিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন। জগন্নাথ হলে তারা সর্বপ্রথম কমিটি ঘোষণা করে। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, হলের যে কোনো সংকট মোকাবিলায় হল কমিটির মাধ্যমেই কাজ করতে হয়।

তার ভাষায়, ‘হলে রাজনীতি নিয়ে একটা ট্রমা বা ভীতি আছে। সেটাকে আমরা সম্মান করি। তবে তাদের অনুভূতি নিয়ে কারা খেলছে, সেটা স্পষ্ট। এখানে হলভিত্তিক অনেক সংকট আছে। সেগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির লোকেরা তো সেখানে যাবে না। সেখানে হল কমিটির নেতারাই ভূমিকা রাখবেন’।

গোপন রাজনীতি কীভাবে বন্ধ হবে?

ছাত্র সংগঠনগুলোর অনেকে বলছেন, আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে সেখানে গোপন রাজনীতি বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকলে হলগুলোকে এর বাইরে কীভাবে রাখা যাবে, সেটাও স্পষ্ট নয়।

এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, গোপন রাজনীতি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

তার ভাষ্য, ‘এখানে গোপন রাজনীতি যারা করছে, মূলত ছাত্রশিবিরের কথাই বলা হচ্ছে যে তারা গোপন রাজনীতি চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিষয়ে কি প্রশাসনের কোনো অবস্থান আছে? প্রশাসন যদি এখানে কঠোর না হয় বা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে এই গোপন রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না’।

তবে হলে রাজনীতি ফেরানোর পক্ষপাতি নন উমামা ফাতেমা।

একই মত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ -বাগছাসেরও। দলটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেছেন, হলে রাজনীতি ফিরলে শিক্ষার্থীরাই এর ভিক্টিম হতে পারেন।

তার মতে, ‘আমরা যখন কোনো প্রোগ্রাম করি, সেখানে বেশি শিক্ষার্থী আনতে হলে সেটা হল থেকেই আনতে হয়। এখন হলে কমিটি নেই। ফলে কেউ বাধ্য করছে না, চাপ দিচ্ছে না। কিন্তু যখনই হলে কমিটি হবে, তারা সেখান থেকে শিক্ষার্থীদেরকে প্রোগ্রামে আনতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। এর জন্য আমরা বলছি রাজনীতি ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ থাকুক’।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেহেতু আবাসিক হলে থাকেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যারা রাজনীতি করছেন তারা হলে থাকলে সেখানে রাজনীতির প্রভাব এমনিতেই তৈরি হবে বলে মনে করেন অনেকে । তবে বাগছাস নেতা আব্দুল কাদের বলছেন, সেটা যেন না হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘রাজনীতির একটি রূপরেখা’ তৈরি করতে হবে।

কী বলছে ছাত্রশিবির

ঢাবির হলগুলোতে রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে যখন নানা যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে তখন শিবিরের অবস্থান অনেকটা মাঝামাঝি। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না সংগঠনটি।

যদিও বিভিন্ন দল প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছে যে, হলগুলোতে ছাত্রশিবিরের ‘গোপন কার্যক্রম এবং কমিটি’ আছে। ফলে হলে প্রকাশ্য রাজনীতি না থাকলে শিবিরের লাভ।

তবে শিবির নেতারা সেটা অস্বীকার করেন।

তাহলে হলপর্যায়ে শিবির কেন নেতাদের পরিচয় প্রকাশ্য করছে না- এমন প্রশ্নে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, তাদের নেতাদের পরিচয় অন্যদের অজানা নয়।

তার ভাষায়, ‘আমরা অসংখ্য প্রোগ্রাম করেছি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এগুলোতে হল থেকেই তো শিক্ষার্থীরা আসছে। হলগুলোতে আমাদের ছোট ছোট টিম তাদের কাছে গেছে। এখন সবাই তো সবাইকে চেনে’। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin