গাজাবাসীদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (১৬ আগস্ট) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেয়। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরম-ডানপন্থি ইনফ্লুয়েন্সার লরা লুমারের দেওয়া একের পর এক পোস্টের পর, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমিত সংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা-মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া ও নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার পূর্ণ ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করছি। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকবে।
লরা লুমার গত শুক্রবার এক্সে গাজার ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একের পর এক পোস্ট দেন। পোস্টগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি গাজার ফিলিস্তিনিদের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা গাজার শরণার্থী দাবি করছে, তারা এই মাসে সান ফ্রান্সিসকো এবং হিউস্টন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে।
তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের হামাসপন্থি, মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কাতারের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্ত বলে বর্ণনা করেন। যদিও তিনি তার এসব দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অপর এক পোস্টে তিনি বলেন, ইসলামি অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া কীভাবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি হয়?
লুমারের সমালোচনার তির ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিল প্যালেস্টাইন। গত সপ্তাহে সংস্থাটি বলেছে, তারা গাজার গুরুতর আহত ১১টি শিশুকে নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। এ নিয়েও একাধিক পোস্ট করেছেন লুমার।
ভিসা স্থগিত ঘোষণার পর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি ফাইন স্পষ্টভাবে লুমারের প্রশংসা করেছেন। লুমার অবশ্য দাবি করেছেন, ফিলিস্তিনি আগমনের বিষয়ে কয়েকজন মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করতে তাকে বার্তা দিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এই বছর মে মাসে প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি ট্রাভেল ডকুমেন্টের ধারকদের ৬৪০টি ভিসা ইস্যু করেছে। বি১/বি২ পর্যটক ভিসা ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড ফিলিস্তিনি শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক ও অমানবিক’ বলে বর্ণনা করে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘গাজার শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম একটি উপায়, তাদের চিকিৎসার জন্য উদ্ধার করা। অন্যথায় গাজার ধসে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে তাদের কল্পনাতীত কষ্ট সহ্য করতে হবে বা তারা মারা যাবে।’
গ্লোবাল পেশেন্ট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক তারেক হাইলাত ওয়াশিংটনকে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক খবর। হাইলাত জোর দিয়ে বলেছেন, চিকিৎসা ভিসা বাতিল করা গাজার শিশুদের ‘সবচেয়ে মৌলিক মানবিক অধিকার’ থেকে বঞ্চিত করছে।
সংস্থাটি এক্সে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র দ্বারা আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় আসা থেকে বাধা দেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ নীতির ইচ্ছাকৃত নির্মমতার সর্বশেষ চিহ্ন।”
সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘এটি গভীরভাবে ব্যঙ্গাত্মক যে ট্রাম্প প্রশাসন চিকিৎসার জন্য আসা ফিলিস্তিনি শিশুদের নিষিদ্ধ করছে। অথচ ইসরায়েলের সরকার থেকে বর্ণবাদী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্তদের জন্য লাল কার্পেট বেয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের সরকারের ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গে সহমর্মিতা করার সর্বশেষ উদাহরণ, যা ক্রমশই আমেরিকান জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে।’
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমাউট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থনের মাধ্যমে ‘তার আত্মা হারিয়েছে’। দোহা থেকে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন যদি ‘গণহত্যা’ বন্ধ করতে চায়, তবে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করা উচিত।