বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে। শুধু প্রযুক্তি বা ডেটা সায়েন্স নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, কৃষি, এমনকি নিরাপত্তা খাতেও এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই ব্যবহারের আগে এর ভালো ও মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
ব্যবসা ও প্রশাসনিক কাজে এআই ভুলভাবে ব্যবহৃত হলে আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে ক্রেতার অসন্তুষ্টির মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় অসাবধানতা থাকলে ডেটা ফাঁস বা সাইবার অপরাধের ঝুঁকি বাড়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সঠিক জ্ঞান ছাড়া এআই ব্যবহারে মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়তে পারে এবং নিজের বিচার ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা হারাতে পারে। তাই এআই ব্যবহারের আগে এর মৌলিক ধারণা, সীমাবদ্ধতা ও নৈতিক দিকগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি।
এআই কেন জরুরি
এআই আমাদের জীবনে জরুরি হয়ে উঠেছে, কারণ এটি তিনটি ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে- সময়, দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা। অনেকেই মনে করেন, চ্যাটজিপিটির মতো টুল ব্যবহার করাই এআইয়ের প্রধান কাজ। আসলে চ্যাটজিপিটি হলো এআইয়ের একটি অংশ, যা লেখা ও কথোপকথনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এআই আরও অনেক বিস্তৃত। এটি মানুষকে চিন্তা, শেখা, উদ্ভাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বয়ংক্রিয়তার মতো সব কিছুতে সাহায্য করে। স্বয়ংক্রিয় টুল ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ, যেমন: ই-মেইল, ডেটা এন্ট্রি, প্রতিবেদন তৈরি—এসব এখন মাত্র কয়েক মিনিটে করা সম্ভব, আগে এগুলো করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগতো।
ডেটা বিশ্লেষণ: এআই কীভাবে কাজ করে
এআই দিয়ে ডেটা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমেই ডেটা সংগ্রহ করতে হয়। মনে রাখতে হবে, সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য ডেটার গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এআই ব্যবহার করে এই ধাপে অপ্রয়োজনীয় ডেটা অপসারণ এবং ডেটাকে বিশ্লেষণ উপযোগী করা হয়। এরপরের ধাপে ডেটা বিশ্লেষণের কাজ হয়। এআই-ভিত্তিক অটোএমএল (অটোমেটেড মেশিন লার্নিং) টুলগুলো এই ধাপকে সহজ করে, কারণ এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মডেল সাজেশন ও ডেটার ইনসাইট দিতে পারে।
ডেটা বিশ্লেষণ শিখতে আজকাল অনলাইনে ও অফলাইনে অনেক সুযোগ আছে। অনলাইনে ডেটা শেখার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। অনেক কোর্সে বাস্তবভিত্তিক প্রজেক্ট থাকে, যা কোর্সে শেখা দক্ষতা সরাসরি কাজে লাগাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও কিছু প্রতিষ্ঠান ডেটা সায়েন্স এবং বিশ্লেষণ শেখানোর কোর্স পরিচালনা করছে। ক্যাগল, গিটহাব ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও বিনামূল্যে শেখার সুযোগ আছে। এসব জায়গায় প্রকৃত ডেটাসেট নিয়ে অনুশীলন করা সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের জন্য এআই: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
শ্রেণিকক্ষের অ্যাসাইনমেন্ট এবং গবেষণায় এআইয়ের ব্যবহার শিক্ষকদের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে এআই টুল শিক্ষার্থীদের দ্রুত কনটেন্ট তৈরি, তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত করতে সাহায্য করছে। অন্যদিকে এতে শিক্ষার মৌলিকতা হুমকির মুখে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় অ্যাসাইনমেন্টের বড় অংশ সরাসরি এআই দিয়ে তৈরি করে জমা দিচ্ছে, ফলে শিক্ষকরা এর মৌলিকতা যাচাই করতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রচলিত প্ল্যাজিয়ারিজম চেকার টুলগুলো এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট শনাক্ত করতে কার্যকর নয়, তাই শিক্ষকরা আরও উন্নত এআই ডিটেকশন টুল ব্যবহার করেও পুরো বিভ্রান্তি কাটাতে পারছেন না।
তাই বলে কি এআই ব্যবহার করা যাবে না? নিশ্চয়ই যাবে। চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে এআইকে দায়িত্বশীলভাবে ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। শিক্ষার্থীদের এআইকে কেবল একটি সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা এবং এর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হওয়ার দিকে তাদেরই নিয়ে যেতে হবে।