অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের অভিযোগে ভেনেজুয়েলা থেকে আসা একটি স্পিডবোটে (দ্রুতগামী নৌকা) হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী। মঙ্গলবারের (২ সেপ্টেম্বর) ওই হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে সন্দেহভাজন মাদকবাহী জাহাজ আটকের বদলে সরাসরি উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বিরল। এর সঙ্গে আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কঠোর অবস্থানের সাদৃশ্য পাচ্ছেন অনেক বিশ্লেষক।
হোয়াইট হাউজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, মাত্র কিছুক্ষণ আগেই আমরা একটি মাদক বহনকারী জাহাজ উড়িয়ে দিয়েছি, সেটিতে অনেক মাদক ছিল। মার্কিন সেনাবাহিনী নৌকার আরোহীদের ভেনেজুয়েলাভিত্তিক অপরাধ চক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য বলে চিহ্নিত করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ, বহু দিন ধরেই আমাদের দেশে প্রচুর মাদক আসছে। সেখান থেকে (ভেনেজুয়েলা) পাচার করার মতো আরও অনেক মাদক রয়েছে।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পরে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ড্রোন থেকে তোলা ওই ভিডিওতে একটি স্পিডবোট বিস্ফোরিত হতে দেখা যায়। ওই হামলায় ১১ জন ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছেন দাবি করে ট্রাম্প বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে কোনও মার্কিন সেনা ক্ষতির শিকার হননি। অবশ্য কথিত মাদকের প্রকৃতি, পরিমাণ, হামলা সংঘটনের প্রক্রিয়া ইত্যাদি সংক্রান্ত কোনও তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা অধিদফতর পেন্টাগনের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
ত্রেন দে আরাহুয়াকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে চিহ্নিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট একাধিকবার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে সংস্থাটি পরিচালনার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি, গত মাসে মাদুরোর গ্রেফতারে তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য পুরস্কারের অঙ্ক দ্বিগুণ করে পাঁচ কোটি ডলার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের অভিযোগ বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কারাকাস। দেশটির কর্মকর্তাদের দাবি, ২০২৩ সালে এক কারাগারে অভিযান চালিয়ে তারা গোষ্ঠীটি ভেঙে দিয়েছে। অপরাধ চক্রটি আর তাদের দেশে সক্রিয় নেই।
এদিকে, ট্রাম্পের প্রকাশ করা ভিডিও ভুয়া হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ভেনেজুয়েলান যোগাযোগমন্ত্রী ফ্রেডি নানেজ। তবে রয়টার্সের প্রাথমিক যাচাইয়ে ফুটেজটিতে কোনও কারসাজির আলামত পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফুটেজটিতে কোনও কৃত্রিম সম্পাদনা করা হয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে রয়টার্স।
তবে মাদক বহনের অভিযোগে সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্তে সমালোচিত হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ওয়াশিংটনের লাতিন আমেরিকা বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউওএলএ’র প্রতিরক্ষা তদারকি পরিচালক অ্যাডাম আইসাকসন বলেছেন, মাদক বহনের সন্দেহে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কারণ হতে পারে না।