রাজধানীর শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ৭ আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। তবে শেষ মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তার আইনজীবী। অন্য ৬ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর হাকিম সেফাতুল্লাহ’র আদালতে শুনানির এক পর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অন্য ৬ আসামির শুনানি নিয়ে জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন—গোলাম মোস্তফা, জাকির হোসেন, মো. তৌছিফুল বারী খাঁন, আমির হোসেন সুমন, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, আব্দুল্লাহীল কাইউম।
লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী তাহমীম মহিমা বাঁধন বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী প্রথমে ওকালতনামায় সই করতে চাননি। পরে জেড আই খান পান্নার ওকালতনামা দেখে তিনি সই করেন। আজ আমরা লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে জামিন আবেদন করি। তিনি একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। তিনি যে অসুস্থ এ বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার বিষয়ে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। সেটা দেখিয়ে জামিনের জন্য শুনানি করার কথা ছিল। কিন্তু শুনানির আগে সঠিক সময় পরিবার মেডিক্যাল রিপোর্ট সরবরাহ করতে পারেনি। এজন্য তার জামিনের আবেদন আমরা প্রত্যাহার করে নেয়।’
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘গত শুক্রবার শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধ আইন করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রবিরোধী, সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড করার কারণেই কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফেরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। লতিফ সিদ্দিকী মঞ্চ ৭১-এর ব্যানারকে পুঁজি করে প্রকৃতপক্ষে দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করতে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করেছেন। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে আনা হলে তিনি বলেছিলেন, আদালতের প্রতি তার আস্থা নেই। আজকে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেছিলেন। আসামিপক্ষ বুঝতে পেরেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই জামিনের কঠোর বিরোধিতা করা হবে। এজন্য তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন টেক ব্যাক (প্রত্যাহার) করে নেন।
মামলার বিবরণী অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের জন্য গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এদিন সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেকের বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
অন্য আসামিরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল, মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু, মো. আল আমিন, মো. নাজমুল আহসান, সৈয়দ শাহেদ হাসান, দেওয়ান মোহম্মদ আলী এবং মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন।