পঞ্চগড় জেলা শহরের এক গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আটক হওয়া গনিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩২) ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তাকে সাজা দিয়ে আদালত রায়ও ঘোষণা করেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ রায় দেয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাসুদ পারভেজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অভিযুক্ত গনিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পঞ্চগড় জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি জাকির হোসেন বলেন পঞ্চগড়ের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালত আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি।
গত ১৬ এপ্রিল বুধবার বিকেলে জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় নিজস্ব কোচিং সেন্টারে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে তিনি পাঁচজন ছাত্রীকে নিয়ে গণিতের ক্লাস নেন। পরে অন্যরা চলে গেলে এক ছাত্রীকে একা পেয়ে যৌন হয়রানি শুরু করেন। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন এবং হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে নিয়ে যান। সেখানে উত্তেজিত জনতা পুনরায় ওই শিক্ষক গণধোলাই দিয়ে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। পরে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেয়।
আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের পাহাড়ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পঞ্চগড় শহরের পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং শহরের একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
এর আগেও তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছিল। তবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আসিফ আহমেদ বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা অভিযোগ পেতাম যে তিনি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেন। বুধবার হাতেনাতে ধরা পড়ায় তাকে জনতা আটক করে প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
মজাহারুল ইসলাম সেলিম বলেন, শিক্ষকেরা জাতি গড়ার কারিগড়। তারাই যদি এমন ন্যাক্কার জনক কাজ করেন তবে সমাজে অনৈতিকতা বেড়ে যাবে। মোকাদ্দসুর রহমান সান বলেন, আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী বলেন, ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আটক শিক্ষককে আমাদের হাতে সোপর্দ করা হয়েছিল। আলামত জব্দ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে আমরা মামলা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
পঞ্চগড়ে আলোচিত এ ঘটনায় শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের রায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনেছে। জনতার দাবি, এ রায় ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।