দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের শুভ্রতায় দেবী দূর্গাকে বরণ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জেলা প্রসঙ্গক্রমে এ বছর পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততাও কয়েকগুণ বেড়েছে।
দিন-রাত এক করে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। শেষ মুহূর্তে রং তুলির আঁচড়ে ফুঁটে উঠছে শক্তির দেবী দুর্গার স্বরূপ। শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় দশভূজা ধারিণী দেবী দুর্গার সঙ্গে একে একে ফুঁটে উঠছে লক্ষী, স্বরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শুভ মহালয়ার দিনে শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আবাহন জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহা ষষ্ঠীর দিনে দেবী বোধন ও ষষ্ঠীকল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বৃহৎ এই উৎসব। ঢাক-কাসা আর উলুধ্বণিতে মূখরিত হয়ে উঠবে প্রতিটি মন্ডপ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এ বছর ৫৭৮টি মন্ডপে দশভূজা ধারিণী দেবী দুর্গার পূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০টি বেশি। জেলা জুড়ে প্রতিমা শিল্পীরা হাতে সময় কম থাকায় দিন-রাত জুড়ে ব্যস্ত। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ প্রায় শেষ, এখন চলছে রং তুলির আঁচড়ে ফুঁটিয়ে তোলার কাজ। তবে খর, বাঁশ, রং, এটেল ও দু-আঁশ মাটিসহ উপকরণের দাম বেড়ে গেলেও প্রতিমার দাম সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি।
প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন, “শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি মন্ডপে সুন্দর ও নিখুঁত প্রতিমা তুলে ধরার। উপকরণের দাম বেড়েছে, কিন্তু দর্শকদের জন্য মান আমরা অপরিবর্তিত রাখছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট সদস্য সচিব প্রবীন চৌধুরী রিপন জানান, “উৎসবের প্রতিটি মুহূর্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।” উৎসবমূখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজস্ব ভলেন্টিয়ার দায়িত্ব পালন করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৃহৎ এই উৎসব। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে। “উৎসব চলাকালীন সকল মন্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থা থাকবে।”
শাস্ত্র মতে, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে ‘গজে করে’, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হবে এবং দেবী গমন করবেন দোলায় চড়ে। এটি শুভ হরিত মানে শক্তির আগমন ও কল্যাণের ইঙ্গিত বহন করছে।