বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ভালো কাজ যেটা হয়েছে যে, জাতিসংঘে আসার সময় আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তারা একসঙ্গে মেলামেশা করতে পারবে, কারণ তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না। তাই আমরা উনাদের নিয়ে এসেছি একসঙ্গে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ করে দিচ্ছি।’ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিদায়ী সরকার আর তারা আগামীর সরকার। বাংলাদেশে তারা সবসময় একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এখানে তারা একসঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, কথা বলছেন। এটি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার এক ধরনের প্রক্রিয়া। কেউ একজন ছবি তুলে বলেছেন, “এটি জাতিসংঘে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ”। একই ফ্রেমে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সুতরাং এটি খুব ভালো একটা মন্তব্য ছিল।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাকে এমন একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, সেটা কোনও দিন কল্পনাও করিনি। এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যে “না” বলার সুযোগ ছিল না। অনেক লোক তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে। তার বিনিময়ে দেশ মুক্ত হয়েছে। দেশে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা এবং তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়ার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এটা কোনও সুসংগঠিত বিপ্লব ছিল না। এটি বিগত ১০ বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে তারা আর সহ্য করতে পারছিল না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে। আমি শিক্ষার্থী বলতে উভয়কেই বুঝাচ্ছি, ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে এই আন্দোলন পরিচালনা করেছে। মেয়েদের বড় একটা অংশ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। এই চমৎকার বিষয়টি বাংলাদেশ আগে কখনও দেখেনি। এমনকি ১০ বছরের ছেলে-মেয়েরাও রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা একইসঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন মারাও গিয়েছে। এই চেতনা থেকেই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান এসেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের ইচ্ছা পূরণ এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। এটা একটা কঠিন কাজ। তবুও আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে কাজ হবে এবং আমরা তার চেষ্টা প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাব। এর মাধ্যমে তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়, এটাকে তারা নাম দিয়েছে “নতুন বাংলাদেশ”।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর ইতোমধ্যে চলে গিয়েছে। সম্প্রতি আমরা এক বছর উদযাপন করেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অভ্যুত্থানের ছবি ঢাকার দেয়ালে এঁকেছে। ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে তাদের চাওয়া পাওয়ার কথা সুন্দর ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছে। বৃষ্টিতে সেসব ছবি ধুয়ে যেতে পারে, আমরা সেই সব ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে রেখেছি। এই কাজে কোনও পরিকল্পনা ছিল না, কোনও সমন্বয় ছিল না, সবাই যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিয়েছে। ছেলেরাও এঁকেছে, মেয়েরাও এঁকেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ অর্থ হচ্ছে, আগে যা কিছুই হয়েছে তার সংস্কার। এর অর্থ হচ্ছে আগের মতো শাসন ব্যবস্থা পুনরায় জন্ম নেওয়ার পথ যেন না থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ওই রকম সরকার যেন আর ফিরে না আসে। আমরা সেই সংস্কার কাজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তার প্রধান অ্যাজেন্ডা হচ্ছে মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, দায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে সাজা দেওয়া এবং নির্বাচন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে আমরা ঘোষণা দিয়েছি নির্বাচনের। আমরা বলেছি যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা তারিখ সুনির্দিষ্ট করবো। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবো।’
তিনি বলেন, ‘সবারই নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা আছে, সবাই বলে তোমার পরিকল্পনা ভুল, আমারটা সঠিক। সুতরাং যাই কিছু আপনি করেন না কেন যথেষ্ট না। এটা বুঝা সহজ যে, তাদের সঙ্গে যা কিছু হয়েছে তার একটা তড়িৎ পরিবর্তন তারা চায়। সুতরাং তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রাখা একটা বড় কাজ আমাদের সবার জন্য।’