জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চগড়ে তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি পৌরসভার ২১৬টি ওয়ার্ডে একযোগে কর্মীসভা আয়োজন করছে দলটি। এতে বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন।
তৃণমূলকে সংগঠিত করাই মূল লক্ষ্য। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ের সংগঠনকে সুসংহত করা, নেতৃত্বকে বলিষ্ঠ করা এবং সাধারণ কর্মীদের উজ্জীবিত করাই মূল উদ্দেশ্য। সভাগুলোতে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ, সদস্য নবায়ন, ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচী এবং সরকার গঠন করলে বাস্তবায়নযোগ্য ১৮০ দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত সভা। গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আটোয়ারী উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের ৫৪টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং এর পর পঞ্চগড় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হবে।
সব সভাই বিকেল ৪টায় একযোগে শুরু হয়। কোথাও কোথাও আলোচনা রাত অব্দি চলে।নতুন ভাবে বিএনপিতে যোগদানের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক সনাতন ধর্মালম্বী বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় নেতারা বলছেন, বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন সদস্যরা যুক্ত হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের অংশগ্রহণ জেলা ও উপজেলা বিএনপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারাও এই আয়োজন মনিটরিং করছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি রীনা পারভিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম মজিদ, মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, আবু দাউদ প্রধান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রুবেল পাটোয়ারীসহ ১৮টি টিম বিভিন্ন ওয়ার্ডে যোগ দিয়ে বিএনপির ৩১ দফা ও ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির বলেন, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য কেবল সভা সমাবেশ করা নয়, বরং তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা এবং তাদেরকে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি কর্মীর ভেতরে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা, যাতে তারা জনগণের কাছে গিয়ে বিএনপির কর্মসূচি, নীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আমরা দেশের জন্য যে ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, তার খুঁটিনাটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ জানতে চায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কাঠামোয় কী ধরনের সংস্কার আসবে। আমরা সেসব বিষয় জনগণের সামনে তুলে ধরছি।”
ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের ভাষায়, আমরা বিপুল সাড়া পাচ্ছি। প্রতিটি সভায় মানুষের আগ্রহ, উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ আমাদেরকে উৎসাহিত করছে। এটি প্রমাণ করছে বিএনপি আজও জনমানুষের দল এবং জনগণ পরিবর্তনের জন্য বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে।
একই সময়ে শত শত ওয়ার্ডে কর্মীসভা আয়োজন পঞ্চগড়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। মাঠপর্যায়ে বিএনপির সক্রিয়তা ও নতুন সদস্যদের যোগদান প্রমাণ করছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দলটি তৃণমূলকে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর।
এর আগে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আদম সুফি, এম এ মজিদ ও অ্যাড. মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজলের নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ নির্বাচন করা হয়। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ২০৭টি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. আদম সুফির নেতৃত্বে একই প্রক্রিয়ায় ২৩টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বিএনপির ভেতরে সাংগঠনিক গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং নেতাকর্মীদের আস্থা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে।