মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা গাজার জন্য একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে, হামাসকে এই প্রস্তাব গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে বলে জানানো হয়েছে। তবে হামাস এ পরিকল্পনা মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিনিময়ে হামাসকে ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং মৃত বলে ধারণা করা দুই ডজনেরও বেশি জিম্মির মরদেহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। এর বিনিময়ে শত শত আটক ফিলিস্তিনিও মুক্তি পাবে।
এক ফিলিস্তিনি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, হামাস কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউজের ২০ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হামাস গাজার শাসন ব্যবস্থায় কোনও ভাবেই যুক্ত থাকতে পারবে না। একইসঙ্গে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনার দরজা খোলা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ পরিকল্পনাকে ‘শান্তির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেন। তবে তিনি বলেন, হামাস পরিকল্পনা মানতে রাজি না হলে নেতানিয়াহুর ‘হামাস ধ্বংসের কাজ শেষ করার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন দেবে।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর শাসনকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ বলে বর্ণনা করেছে।
সংবাদ সংস্থা ওয়াফার মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র, আঞ্চলিক রাষ্ট্র ও অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে, যাতে গাজা যুদ্ধের অবসান, গাজায় যথেষ্ট মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত হয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শুরুতেই সামরিক অভিযান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। কিন্তু সেনারা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের অবস্থান বদলাবে না। পরে হামাস শর্ত মেনে নিলে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং তাদের টানেল ও অস্ত্র তৈরির স্থাপনা ধ্বংস করতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, যে কোনও ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিপরীতে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফেরত দেবে।
এছাড়াও প্রস্তাবে উল্লেখ আছে, উভয় পক্ষ প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজা উপত্যকায় পূর্ণ মাত্রার সাহায্য পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কেও পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি অস্থায়ীভাবে গাজা শাসন করবে। আর এই শাসন ব্যবস্থা তদারকি করবে একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী সংস্থা-‘বোর্ড অব পিস’। এই সংস্থার প্রধান থাকবেন ট্রাম্প।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার টনি ব্লেয়ার এই সংস্থার অংশ হবেন। আরও কিছু নেতার নাম পরে ঘোষণা করা হবে। টনি ব্লেয়ার এ পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
পরিকল্পনার বড় একটি অংশ রয়েছে গাজা পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ নিয়ে। এতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না এবং তাদের সেনারা ধাপে ধাপে প্রত্যাহার হবে।
ট্রাম্পের পূর্ববর্তী বক্তব্য থেকে ভিন্নভাবে এবার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না। বরং নথিতে লেখা হয়েছে, আমরা মানুষকে থাকার জন্য উৎসাহিত করব এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেব।’
পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাও খোলা রাখা হয়েছে।