আট হাজার টাকার টেবিল দাম ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় চার হাজার টাকার চেয়ার ১১ হাজার ৩৫২ টাকা,সাড়ে ৫শ টাকার ফুটবল এক হাজার ৩৩৩ টাকা, এমন অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এডিপি প্রকল্পে।
যথাযথ নিয়ম-কানুন না মেনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সরকারের আমলে প্রকল্পের নামে যে হরিলুট হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সেই পুরানো প্রেতাত্মা ভর করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরজমিনে প্রকল্পটির ব্যয় যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে তিন ফুট মেহগনি কাঠের মূল্যসহ সব মিলে ৮ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও প্রকল্পে দাম ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিটি চেয়ার চার হাজার টাকার মধ্যে নির্মাণ সম্ভব হলেও দাম ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৫২ টাকা। সাড়ে ৫শ টাকার ফুটবলকে ১ হাজার ৩৩৩ টাকা। এক একটি উপাদানের কেনাকাটার অতিরিক্ত ব্যয় সর্বনিম্ন দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। সরজমিনে এটাও দেখা গেছে, নয়টি টেবিল থাকার কথা থাকলেও ছিল সাতটি, ৪২ টি চেয়ারের স্থানে ছিল ৩০ টি।
স্থানীয় কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, টেবিল চেয়ারের যে নকশা, তাতে একটি টেবিল ও একটি চেয়ারে চার-পাঁচ হাজার টাকার কাঠসহ সব কিছু মিলে ১২ হাজার টাকা হলেই দেওয়া সম্ভব।
তেতুঁলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ও তেতুঁলিয়ার ইউএনও সূত্রে জানা গেছে ,২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এডিপি বরাদ্দ ৮৪ লাখ, রাজস্ব বরাদ্দ প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। তার মধ্যে পিআইসি কমিটির মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ, ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ৪৫ লাখ এবং কোটেশনে নেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকার কাজ। যা তেতুঁলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজের পছন্দমতো এক ঠিকাদারকেই ৪০ লাখ টাকার সংস্কার কাজ দিয়ে লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে টেনিস গ্রাউন্ডে ২০ লাখ, বেরং কমপ্লেক্স ১০ লাখ, তেতুঁলিয়ার ইউএনওর বাস ভবন মেরামত বাবদ ১০ লাখ, পিকনিক কর্নারের জন্য ১০ লাখ টাকা।
তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার স্ক্রীমে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নয়টি ডাইনিং টেবিলের দাম ধরা হয়েছিল তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং ১১ হাজার ৩৫২ টাকা ব্যয়ে ৪২ টি ডাইনিং চেয়ারের ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ টাকা। মোট ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে তেঁতুলিয়ার হাসান এন্টার প্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। টেবিলে গ্লাস দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাসান বলেন, কাজ যেভাবে ধরা ছিল সেভাবেই করা হয়েছে। কাজ শেষ করে আমি আট লাখ পাঁচ হাজার টাকার বিলও পেয়েছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো:ইদ্রিস আলী খান বলেন, অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। প্রাক্কলন যেভাবে আছে সেভাবেই কাজ শেষ করা হয়েছে।
টেবিল চেয়ারের দাম অস্বাভাবিক ধরার বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, সে কাজের প্রাক্কলন কোড ৬৮ হাজার টাকা। আমরাতো এতো টাকা দেইনি। আপনারা বার বার আমার কাছে আসেন, আমি কি করব।প্রকল্প দেওয়াটা আমার কাজ, বাস্তবায়ন করবে উপজেলা প্রকৌশল অফিস।