বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডে (বিজিএফসিএল) যোগ দিয়েই বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন। শুধু নিজের জন্য নয়, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের জন্যও কোম্পানির গাড়ি ও চালক ব্যবহার করছেন তিনি। এতে মাসে লাখ টাকারও বেশি খরচ বহন করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের।
যোগদানের পরই শুরু বিলাসঃ
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বিজিএফসিএলের এমডি হিসেবে যোগ দেন ফারুক হোসেন। এর আগে তিনি সিলেট গ্যাস ফিল্ডে কর্মরত ছিলেন। এমডি হিসেবে একটি গাড়ি অফিসিয়ালভাবে সুবিধা পাওয়ার পরও তিনি পরিবারের জন্য আরও একটি দামি গাড়ি দখলে নেন।
ঢাকার মিরপুরে তার বাসায় সবসময় প্রস্তুত রাখা হয় বিজিএফসিএলের মালিকানাধীন একটি মিতসুবিশি গাড়ি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-গ ১১-০০১৩)। গাড়িটি চালান কোম্পানির চালক মো. কাইয়ুম খান। এমডির দুই সন্তানকে স্কুল-প্রাইভেটে আনা-নেওয়া ছাড়াও পরিবারের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় এই গাড়ি।
মোটা অঙ্কের ওভারটাইম ও জ্বালানি খরচ
বিজিএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমডির পরিবারের জন্য নিয়োজিত চালক কাইয়ুম কেবল আগস্ট মাসেই বেতনের পাশাপাশি ওভারটাইম বাবদ ৭০ হাজার টাকার বেশি পেয়েছেন। ওই মাসে গাড়ির জ্বালানির খরচ হয়েছে ২০০ লিটারের বেশি, যার বাজারমূল্য ২৪ হাজার টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে কোম্পানিকে।
চালকের স্বীকারোক্তিঃ
এমডির পরিবারের ডিউটি করা চালক কাইয়ুম খান জানান, প্রতিদিন এমডির দুই সন্তানকে স্কুল ও প্রাইভেটে আনা-নেওয়া তার দায়িত্ব। এছাড়া পরিবারের অন্য প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার হয়। এসব কাজে অতিরিক্ত সময় দিলে নিয়ম অনুযায়ী ওভারটাইম ভাতা পান বলেও জানান তিনি।
নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণঃ
কোম্পানির গাড়ি ব্যবহার নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে—ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করতে হলে রিকুইজিশন ফরম পূরণ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। সেক্ষেত্রে দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত না ঘটলে ভাড়া প্রদানের শর্তে গাড়ি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া অফিস থেকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে এ সুবিধা গ্রহণের নিয়ম আছে। কিন্তু এমডির পরিবারের গাড়ি ব্যবহার এসব নিয়মের সম্পূর্ণ বাইরে চলছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এমডি প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন,“আমি সব মহাব্যবস্থাপককে বলেছি, আমাকে বৈধ সুবিধার বাইরে কিছু দেওয়া হলে তা বাতিল করতে। আমি এসব চাই না। আগে কখনও আমি বিজিএফসিএলের এমডি ছিলাম না। তাই এখানে এমডি বা জিএম কী সুবিধা পান, তা আমি জানি না। আমার পরিবার গাড়ি সুবিধা পায় কিনা তাও আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে যারা কর্মরত, তারাই ভালো জানবেন।”
প্রশ্ন রয়ে গেলঃ
বিজিএফসিএলের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার এমন অভিযোগে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিগত বিলাসে ব্যবহার করা কি এমডির “অজান্তে” সম্ভব? নাকি ক্ষমতার প্রভাবেই নীতিমালা ভঙ্গ হচ্ছে প্রকাশ্যে?