পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষাগত যোগ্যতায় ভূয়া কাগজ ব্যবহার করে ছেলেকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। বাবা আর ছেলে মিলে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, এমপিও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই মাদরাসার নাম ভাউলাগঞ্জ দারুসসালাম নেছারিয়া আলিম মাদরাসা। মাদরাসাটি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ বাজারে। অভিযুক্ত ওই অধ্যক্ষের নাম মাওলানা আজিবুর রহমান। তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ওলামা দলের দেবীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি
এছাড়া নিয়োগে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এনটিআরসি নিবন্ধন ছাড়া ১০ জন শিক্ষক ও নানা অনিয়ম করে ৫ জন কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ব্যাক্তি।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ দারুসসালাম নেছারিয়া আলিম মাদরাসায় গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এনটিআরসি নিবন্ধন ছাড়া বিভিন্ন পদে প্রায় ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ আজিবুর রহমান ও তার ছেলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহমুদ হাসান মাসুদ। এছাড়া মাসুদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজে ক্রটি রয়েছে। তার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ভূয়া। তিনি ভুয়া সনদ তৈরির মূল কারিগর এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদরাসার মুল ভবনের নকশা পরিবর্তন করে শ্রেণী কক্ষের জানালা বন্ধ করে সড়কের উপরে দোকান নির্মাণ করেছেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মাদরাসার স্বার্থবিরোধী।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাবা ছেলে মিলে তারা প্রতিষ্ঠানে অরাজকতা শুরু করেছেন। অনিয়ম করে ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে সরকারি বিধিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী উপায়ে। এছাড়াও বর্তমানে আরো ৫ জন শিক্ষকের এমপিও অনুমোদনের জন্য পূর্বের নিয়োগ দেখিয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যেখানে সরকারি সময়সীমা ছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মকান্ড পুরোপুরি বেআইনি ও শিক্ষানীতি বিরোধী।
অনিয়মমূলক কর্মকান্ডে দেবীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সক্রিয় সহযোগিতা করছেন। যার ফলে এসব বেআইনি কাজ রোধ করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মাদরাসার শিক্ষা পরিবেশ রক্ষা, সরকারি বিধিমালা বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতি দমন করার লক্ষ্যে, মাদরাসার সভাপতির ভুয়া সনদপত্র যাচাই ও ব্যবস্থা গ্রহণ, এনটিআরসি ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বিষয়ে তদন্ত, অবৈধ ভাবে দোকান নির্মাণ ও মাদরাসার অবকাঠামো পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগকারী মামুন মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ছেলেকে সভাপতি বানিয়েছেন অধ্যক্ষ বাবা। তাদের অনিয়মের শেষ নেই। আমরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। সঠিক তদন্ত চাই। এই ঐতিহ্যবাহী মাদরাসার সুনাম কেউ ক্ষুন্ন করুক সেটা আমরা চাই না। নিয়োগ বাণিজ্য ও বাবা ছেলের দুর্নীতির বিচার চাই। যাতে আর কেউ এসব করার সাহস না পায়।
এবিষয়ে জানতে ভাউলাগঞ্জ দারুসসালাম নেছারিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ আজিবুর রহমান বলেন, আমার ছেলের বিষয়ে আপনার আপত্তি কথায়। আমিতো আপনার সব কথার উত্তর দিতে পারবোনা। একটা তদন্ত হচ্ছে সেটা হোক। ঠিক আছে ভাল থাকবেন।
সম্প্রতি এই অভিযোগের তদন্তে মাদরাসাটি পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়ে তদন্তে গিয়েছিলাম। তাদের কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা অফিসার জড়িতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও দেখা হচ্ছে। সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।