উদ্বেগ বাড়ছে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে। তথ্যের স্বাধীনতা রক্ষাকারীরা বলছেন, সত্য প্রকাশের পথে ভয়ভীতি ও দমনপীড়ন এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির বিবেক বলা হয়। যখন সেই বিবেককে আঘাত করা হয় তখন সবাই ভুলে যায় সেই বিবেকের কথা
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে সাংবাদিকরা আর সেই কাজের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হামলা, হুমকি এমনকি প্রাণনাশের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে কতটা নিরাপদ আজ সাংবাদিকতা?
লক্ষ্য করা যায় স্থানীয় প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে খবর করলেই পড়তে হচ্ছে হুমকি, মামলা কিংবা শারীরিক আক্রমণের মুখে।
এছাড়াও গত আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে জুলাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জন হত্যা এবং ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা।
জুলাই মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৯টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।
আগস্ট মাসে ৩৩টি সাংবাদিক নির্যাতন–সংক্রান্ত ঘটনায় ৭টি বিএনপি, ৬টিতে পুলিশ, ৩টি ঘটনায় শিক্ষক, ৫টি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী, ২টিতে চোরাকারবারি, ১টি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলার শিকার, ১টিতে এনজিও, ১টিতে পেশকার, ৪টিতে দুষ্কৃতকারী, ১টিতে পত্রিকা অফিস এবং ২টিতে সাময়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
আগস্ট মাসের ৭ তারিখ রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। তাঁর মারা যাওয়া নিশ্চিত হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজেরা তথ্যানুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে এমএসএফ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে, সত্য প্রকাশ ও জনস্বার্থের তথ্য অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।