বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন
Title :
ওয়ান নিউজ বিডি-২৪ এর সম্পাদক ও প্রকাশকের মায়ের ইন্তেকাল বাকেরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামের নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত আ.লীগের ডাকা লকডাউনের প্রতিবাদে শেরপুরে শ্রমিকদলের বিক্ষোভ মিছিল পলাশবাড়ীতে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব-বাদীর স্বামীর হাতের আঙ্গুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ বিবাদীর বিরুদ্ধে বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড মেহেরপুর পুলিশ সুপারের বাসভবনে আগুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত কবির সমর্থকদের কাফন মিছিল গলাচিপায় হাসান মামুনের আগমনে জনতার ঢল, উৎসবমুখর জনসভা প্রাঙ্গণ মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

হারিয়ে যাচ্ছে মাটিতে বসে চুল দাড়ি ছাঁটা

রেজাউল ইসলাম মাসুদ, ঠাকুরগাঁও 
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৭ Time View
হারিয়ে যাচ্ছে মাটিতে বসে চুল দাড়ি ছাঁটা
হারিয়ে যাচ্ছে মাটিতে বসে চুল দাড়ি ছাঁটা

আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে আধুনিক ও উচ্চমানের সেলুন। এই সেলুনের কদর দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন হাট-বাজারে কিংবা শহরের বিভিন্ন স্থানে সেই সব সেলুনগুলোর দিকেই। তারপরেও আধুনিক ও স্মাট যুগে এসেও এখনো উপজেলার হাড়িপুকু বাগেরহাট গড়েয়া খঁচাবাড়ি সহ বিভিন্ন প্রান্তের হাট ও বাজার কিংবা গ্রামগঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে চুল ও দড়ি কাঁটেন নরসুন্দরেরা।

চুল-দাঁড়ি কাটার কারণে যুগের পর যুগ ধরে নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল-দাঁড়ি কেটে মানুষকে সুন্দর করাটাই একমাত্র কাজ বলে তাদেরকে নরসুন্দর বলা হয়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা গড়েয়া ইউনিয়নের, গড়েয়া বাজার এলাকায় মাটিতে বসে চুল ও দাঁড়ি কাটানোর চিরচেনা দৃশ্যটি চোখে পড়ে যায়। পিঁড়িতে বসে অল্প খরচে এখনো তাদের কাছে অনেকেই চুল ও দাঁড়ি কাটান।

গড়েয়া ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকার নরসুন্দর কান্দু শীল (৮০) দেবেন বর্মন (৭৫)। এ দুজন একে পরের সহযোদ্ধা। বংশ পরিক্রমায় নরসুন্দর হয়েছেন। এই সহযোদ্ধা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এ পেশায় আছেন।

কান্দু শীল (৮০), দেবেন চন্দ্র(৭৫) আধুনিক ও উচ্চমানের গড়েয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সেলুনের দোকান থাকলেও উনারা এই বৃদ্ধ বয়সে গড়েয়া বাজারের এককোণে পিঁড়িতে বসে মানুষের চুল ও দাঁড়ি কাটে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনাদের পথ চলার একে অপরের সহযোদ্ধা খোলা আকাশের নিজে বসে মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটেন। এভাবেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে।
রয়েছে, কান্দু শীলের (৮০), দুই ছেলে। দেবেন চন্দ্রের(৭৫), তিন ছেলে। তারাও নরসুন্দর।

এ দুজনের কারণে এখনো বাজারে জলচৌকিতে বসে কাঠের বাক্স যার মধ্যে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকিরি, পাউডার ও লোশন নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুন্দর করে যাচ্ছেন। অনেক বছর আগে চুল কাটা বাবদ নিতেন পাঁচ পয়সা আর দাঁড়ি কাটার জন্য দু পয়সা। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু বর্তমানে ৩০ টাকায় চুল ও ১০টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসার চালানো তাদের হিমশিম খেতে হয় তাদের।

তারা আক্ষেপ করে জানান, বর্তমানে যে পরিবর্তন এসেছে চুল-দাঁড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিও পরিবর্তন হয়েছে। সেসব সেলুনে এখন আর শান দেওয়া ক্ষুর দেখাই যায় না। তার বদলে এসেছে বেলেড লাগানো ক্ষুর। এখন এসেছে চুল কাটানো মেশিন, শেভিং ক্রিম, লোশন, চুলের কলপ। আমরা যখন বাপ-দাদার কাছে কাজ শিখে নিজেরাই কাজ শুরু করি তখন এগুলো আমাদের কাছে ছিল কল্পনাতীত। তবুও এ বৃদ্ধ বয়সে একদিকে বাপ-দাদার পেশাটা ধরে রাখার লড়াই ও অন্য দিকে জীবন-জীবিকার তাগিদে রোদ-বৃষ্টিতেও চুল-দাঁড়ি কাটান তারা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা এই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন বলে জানান এই দুই নরসুন্দর।

স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল, সাইদুল, দেলোয়ার, জুয়েল বলেন, এখন তো বিভিন্ন হাট-বাজারে অনেক অনেক আধুনিক সেলুন আছে। কিন্তু যখনই বাজারে যাই, ওই চুল কাটা দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। কারণ তারা যখন চুল কাটতো, দুই হাঁটু দিয়ে আমাদের চাপ দিয়ে ধরতো, যেন নড়াচড়া না করতে পারি। ফলে যখন চুল কাটতো, তখন তার হাঁটুর ওপর ঘুমিয়ে পড়তাম। চিরচেনা দৃশ্য ছোট বেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অন্য এলাকায় আছে কি না আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের এলাকায় এই দুই নরসুন্দর থাকায় আমরা এখনও মাটিতে বসা নরসুন্দুরদের কাছে চুল-দাঁড়ি কেটে নেই।

গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন রেনু বলেন, আমরা ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে যেতাম। চুল কাটাতে তাদের দায়িত্ব দিয়ে বাবা বাজারের সব কাজ শেষে আসতেন। এখন আর তাদের কাছে চুল-দাঁড়ি কাটায় না। এখনকার ছেলে-মেয়েদের চুল কাটায় আধুনিক সেলুনগুলোতে। আমরা এখনো এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও এমন একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্পই মনে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 onenewsbd24.com
Developed by: FAZLY RABBY
Tuhin