 
																
								
                                    
									
                                 
							
														
মাত্র দুই চিকিৎসকের কাঁধে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগীর দায়িত্ব
বান্দরবান জেলার দুর্গম পাহাড়ি উপজেলা আলীকদম। এ উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে চরম জনবল সংকট। মাত্র দুইজন চিকিৎসকের কাঁধে প্রতিদিন তিন থেকে চারশত রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ভার পড়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবার মান ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।
সম্প্রতি হাসপাতালে ১৯ জন নতুন নার্স যোগ দিলেও চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়েনি। অথচ বর্তমানে ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বরসহ মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের প্রতিটি বেডেই ভর্তি রয়েছে রোগী। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নিতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়সহ দূর-দূরান্তের মানুষ।
চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে নার্স নয়, ডাক্তার দরকার। একজন ডাক্তারকে ঘিরে এত রোগী থাকে যে, নিজের সমস্যাটা বলারও সুযোগ পাওয়া যায় না।” কেউ কেউ অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অভাবে অনেক সময় জরুরি রোগীদেরও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সদস্যরা বলেন, আলীকদম একটি দুর্গম সীমান্তবর্তী উপজেলা, এখানে প্রতিদিন পাহাড়ি ও বাঙালি মিলিয়ে শত শত মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য আসেন। কিন্তু মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে এতো বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়।
তারা জানান, সম্প্রতি ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধিতে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে জটিল অবস্থা দেখা দিচ্ছে, অথচ এখানে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম।
স্থানীয়রা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে জরুরি ভিত্তিতে একজন গাইনী এবং একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, “চিকিৎসক সংকট নিরসন না হলে আলীকদমের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্য উপজেলায় ছুটতে হবে, যা সময় ও খরচ—দুই দিক থেকেই কষ্টদায়ক।”
স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা—আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করা হোক, যেন এই পাহাড়ি জনপদের মানুষও পায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা।
আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোঃ হাছান জানান, “বর্তমানে হাসপাতালে মাত্র দুইজন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিদিন তিন থেকে চারশত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এতে রোগীদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে অনেকেই সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে একটি আধুনিক ভবন থাকলেও উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা অন্যান্য বিশেষায়িত পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অন্যত্র রোগী রেফার করতে হয়, যা রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভোগান্তিকর।”