মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও প্রাণপণে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা মো. জুবায়েদ হোসেন। কিন্তু টিউশন ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার মন গলেনি। ডিএমপির প্রেস ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে সেই দিনের নির্মম ও হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ।
জবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন তারই ছাত্রী বর্ষা। এ সময় জুবায়েদ বাঁচার আকুতি জানালে সে বলে, “তুমি না মরলে আমি মাহিরের হতে পারব না।”
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি।
তিনি বলেন, “জুবায়েদ তখনো মারা যায়নি। বাঁচার জন্য দ্বিতীয় তলা থেকে উপরে ওঠে। তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল বর্ষা। তখন বর্ষাকে দেখে জুবায়েদ বলে, ‘আমাকে বাঁচাও।’ কিন্তু বর্ষা বলে, ‘তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না।’ এরপর বর্ষা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সেখান থেকে চলে যায়। জুবায়েদ বাঁচার জন্য দরজায় নক করলেও কেউ সাড়া দেয়নি।”
ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনা। বর্ষা মেয়েটি চতুর – দুই দিকেই সম্পর্ক বজায় রাখছিল। এটি প্রায় মিন্নি হত্যাকাণ্ডের মতোই। বর্ষা মাহিরকে বলে, ‘জুবায়েদকে না সরালে তোমার কাছে ফিরতে পারব না।’ বর্ষার পরিকল্পনা অনুসারেই মাহির ও তার বন্ধু আয়লানসহ তিনজন মিলে জুবায়েদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন মাহির জুবায়েদকে বলে বর্ষার থেকে সরে যেতে। জুবায়েদ জানায়, ‘আমি সরে আসব কেন?’ তখন তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয় এবং পরে ঘটে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড।”
জুবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে জবিস্থ কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানীটোলার ১৫, নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলায় বার্জিস শাবনাম বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন। ওই ছাত্রীর বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন।
রবিবার আনুমানিক বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলার সিঁড়িতে জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।