আইনের ব্যর্থতা নাকি, প্রভাবশালীর ছায়া ?

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় নারী নির্যাতন মামলার আসামি প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাকে গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন। এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী তাহমিনা বেগম। উপায় না পেয়ে ন্যায়বিচারের আশায় তাহমিনা বেগম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ন্যায়বিচার না পেয়ে অবশেষে তাহমিনা বেগম গত ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। যার পিটিশন মামলা নং-৭৪০/২০২৫।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামী এমদাদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের পক্ষিয়া গ্রামে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) নামের একটি এনজিওর মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তহমিনা বেগম নিজ গ্রামে মৎসজীবী গ্রাম সমিতিতে সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। এমদাদ মাসে দুইবার মৎসজীবী গ্রাম সমিতি পরিদর্শন করেন এবং ঋণ গ্রহীতাদের নিকট থেকে কিস্তির টাকা উত্তোলন করেন।

উক্ত কাজের সূত্র ধরে এমদাদের সাথে তহমিনার পরিচয় হয়। বিভিন্ন সময় তহমিনা যখন সমিতি ঘরে একা থাকতো তখন এমদাদ কু-প্রস্তাব দিতো।

তহমিনা এমদাদকে একাধিকবার এধরণের কর্মকান্ডের বিষয়ে নিষেধ করতো। কিন্তু এমদাদ মনে মনে ক্ষোভ নিয়ে সুযোগ খুজতে থাকে। গত ১৭ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতি ঘরের মধ্যে বসে ইমদাদের সাথে তহমিনার সমিতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তার চলাকালিন সময় হটাৎ করে ইমদাদ তহমিনার সাথে কু-রুচিপূর্ন কথাবার্তা শুরু করে এবং শরীরে হাত দেয়। এসময় তহমিনা তাকে বাধা দিতে গেলে ইমদাদ ক্ষিপ্ত হয়ে তহমিনাকে মারধর করে এবং পরিহিত কাপড় ধরে টানা হেচড়া করে। এসময় তহমিনার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে ইমদাদ সু-কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইমদাদের অফিসে অভিযোগ করলেও তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আজ কাল করে ঘুরাইতে থাকে। পরে তাদেও কাছ থেকে কোন ধরনের সমাধান না পেয়ে গলাচিপা থানায় গত ১২ অক্টোবর মামলা করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার পরামর্শ প্রদান করে। পরে ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পরও এমদাদ হোসেন প্রকাশ্যে অফিসে কাজ করছেন এবং শহরে অবাধে চলাফেরা করছেন, যা ভুক্তভূগী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ- মামলার আসামি গ্রেপ্তারে অবহেলা এবং অস্বাভাবিক নীরবতা পালন করছেন পুলিশ। এর ফলে সাধারণ মানুষ আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। মামলা হওয়ার পরও আসামি যখন প্রকাশ্যে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। আসামী গ্রেফতাওে প্রশাসনের নীরবতাকে আসামি রক্ষার প্রচেষ্টা বলেই মনে করেন স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগী তাহমিনা বেগম বলেন, ঘটনার পর সমিতির সদস্যরা এসডিএফ গলাচিপা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে আমি থানায় গেলেও অভিযোগ নিতে গড়িমসি করেন এসআই কামাল হোসেন। তিনি বিষয়টি এনজিওর অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে এড়িয়ে যান।

থানায় গিয়ে অভিযোগ বিচার না পাওয়ায় পরে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। বর্তমানে আসামি প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাকে গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন। এখন আসামি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত মাঠকর্মী এমদাদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এসডিএফ অফিস ম্যানেজার এম. এ. সায়েম বলেন, বিষয়টি জানি, মীমাংসার জন্য চেষ্টা করছি।

এবিষয়ে এসআই কামাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখা হবে।